খুলনাতে পলিটেকনিক/ডিপ্লোমা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট ট্রেনিংHAMKO_Future_Tech_Academy

শৈশব থেকেই অমানুষিক কষ্ট, ক্ষুধা, নির্যাতন ছিল তাঁর সঙ্গী। চেয়েছিলেন নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু ট্রেন দুর্ঘটনায় কাটা পড়ে এক পা। জীবন যখন একটু গুছিয়ে এনেছিলেন, তখনই ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তারপরও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শিল্পী সেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এখন সফল শিল্পী। মাসে আয় করেন দুই লাখ টাকার মতো।

১৯৯৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার কানাইনগর গ্রামে জন্ম। বাবা বিকাশ সেন, জাহাজে চাকরি করতেন। শৈশবে মাকে হারিয়েছেন শিল্পী সেন। তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেছিলেন। চার বছর বয়স থেকে সৎমায়ের অনাদর পেতে হয় শিল্পীকে। বাবার কাছে কখনো নালিশ জানাতে পারেননি। সৎমায়ের কারণে বাবার বাড়ি ছাড়তে হয় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়। অনাত্মীয় মানুষের বাড়িতে থেকে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে, ঘরের কাজ করে নিজের পড়ালেখা চালাতে হয়েছে শিল্পীকে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পেরোনো

২০০৯ সালে এসএসসি পাস করেন শিল্পী সেন। কিন্তু সৎমা সবাইকে জানান, শিল্পী ফেল করেছেন। কলেজে ভর্তির ফি ৫০০ টাকাও দেননি সৎমা। বাগেরহাটের মোংলার গির্জার যাজক ফাদার মারিনো রিগন শিল্পীকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন কলেজে ভর্তির জন্য।

এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় আসে। টাকা চাওয়ার মতো কেউ নেই। বাবা তখন জাহাজে গেছেন কাজে। সৎমা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। শিল্পী তাঁর নাকফুল বিক্রি করেন। কিন্তু তাতে কতটুকুই–বা হয়! এক বান্ধবীর অফিস সহকারী বাবা এগিয়ে আসেন। ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করেন শিল্পী।

সেবিকা হওয়ার প্রস্তুতি

সেবিকা বা নার্স হতে চেয়েছিলেন শিল্পী। নার্সিং পড়ার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউটে আবেদন করেন শিল্পী, সুযোগও পেয়ে যান। এই প্রতিষ্ঠানে অনেক নিয়ম ও পড়াশোনার চাপ থাকলেও তিন বেলা খাবারের চিন্তা নেই। বই-খাতা-কলমের জন্য হাত পাততে হয় না কারও কাছে। মাস গেলে যে টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যেত, তা দিয়ে নিজের খরচ চালাতেন শিল্পী।

শিল্পী সেন বলেন, ‘মনে হতে লাগল আমি স্বর্গে চলে এসেছি। আমার দিন বদলাতে থাকল। মনোবল ফিরে পেলাম।’

নার্সিং পড়ার সময় মাঝেমধ্যে শরীর খারাপ হতো শিল্পীর। একবার ছুটিতে বাড়ি গেলেন। অসুস্থ বোধ করলে বাবাকে জানালেন যে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে যাবেন চিকিৎসা করাতে। বাবা অনুমতি দিলেন। কিন্তু এই যাওয়াই কাল হলো তাঁর।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

২০১৬ সালের ৫ মার্চ ভোর সাড়ে চারটায় মির্জাপুর স্টেশনে খুলনা থেকে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন শিল্পী সেন। ট্রেনের চাকার নিচে চলে যায় তাঁর পা। প্রাণপণ চেষ্টায় পরিচিত চিকিৎসক ও নার্সরা মিলে বাঁচিয়ে তোলেন তাঁকে। কিন্তু বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। সেই থেকে ক্রাচ আর কৃত্রিম পা শিল্পী সেনের সঙ্গী।

হাসপাতাল থেকে ফিরে বড় ভাইয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন শিল্পী সেন। একসময় বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্তু শিল্পী তখন রাজি ছিলেন না। শিল্পী বলেন, ‘এমন জীবনের সঙ্গে কাউকে জড়াতে চাইনি। কিন্তু যিনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ফলে ২০১৭ সালের ৫ জুলাই জয়দেব মৃধার সঙ্গে বিয়ে হয় আমার। ঘরোয়াভাবে সবকিছু সম্পন্ন হয়।’ জয়দেব মৃধা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এই দম্পতির এখন এক ছেলে।

নিজে কিছু করতে চাইলেন শিল্পী

শ্বশুরবাড়ির আনন্দময় পরিবেশ তাঁর দুঃখের দিন ভুলিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু শিল্পী নিজে কিছু করতে চান, ঘরে বসে থাকতে চান না। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ২০ দিনের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স করার সুযোগ পান শিল্পী। সেখানে একজন প্রশিক্ষকের কাছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা শোনেন। কম্পিউটার শেখার পর গুগল আর ইউটিউব ঘেঁটে কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠানের খবর পান। শিখতে শুরু করেন। অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া-নেওয়ার ওয়েবসাইট (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) ফাইভআর ও আপওয়ার্কে হিসাব খোলেন শিল্পী সেন। ১২০ ডলারের প্রথম কাজ পান। প্রথম বছরে তিনি ২০ হাজার টাকার মতো আয় করেন। কিন্তু আরও উচ্চতর বিষয় শিখতে চান শিল্পী।

একপর্যায়ে স্কিলআপার নামের এক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পান তিনি। শিল্পী বলেন, ‘স্কিলআপারের শামীম হোসাইনের সঙ্গে কথা বলি। তিনি কাজ শিখতে ও লেগে থাকতে বলেন। আমিও বলেছিলাম, “জীবনটা বদলাতে চাই।” তিনি উৎসাহ দিয়েছিলেন।’ শিল্পী বলেন, ‘আমার জীবনের দুজন মেন্টর। শামীম ভাই ও দেবদাস দাদা। আমি যখন কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাঁরা প্রায়ই আমার খবর নিতেন। হয়তো সে জন্যই দুই বছর পর ২০২১ সালে আবার কাজে ফিরে আসি। নতুন করে প্রোফাইল সাজালাম।’

বিরতির পর নতুন উদ্যমে

দ্বিতীয় দফায় প্রচুর কাজ পেতে থাকেন শিল্পী। বিরতির পর প্রথম মাস থেকেই গড়ে দুই লাখ টাকার কাজ করেন তিনি। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে শিল্পী ফেসবুক অ্যাডস ও গুগল অ্যাডস ক্যাম্পেইনের কাজ করেন। বেশির ভাগ কাজ আসে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন ও জার্মানি থেকে।

 শিল্পীর স্বপ্ন শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করবেন। তিনি বলেন, ‘অনেক প্রতিবন্ধী মানুষকে অবহেলিত হতে দেখেছি। খুব কষ্ট হয় আমার। তাই আমি নিজের পাশাপাশি এই সহযোদ্ধাদের পাশেও দাঁড়াতে চাই।’

Hamko ICT Ltd. is a Bangladeshi tech company having primarily focused on software development service in home and abroad. HAMKO_ICT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here