ভিডিও গেম কীভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গেছে, আমাদের মস্তিষ্ক একই সময়ে একাধিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথচ আমরা সব সময় মস্তিষ্কের এই দারুণ সক্ষমতার ব্যাপারে সচেতন নই বা এর পূর্ণ সদ্ব্যবহারের প্রতি তেমন গুরুত্ব দিই না। কিন্তু বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এখন প্রতিদিন-প্রতিমুহূর্ত একসঙ্গে একাধিক কাজ সম্পন্ন না করে উপায় নেই। সব্যসাচী, অর্থাৎ একাধারে দুহাতে কাজ করতে পারাকেই এত দিন আমরা বলে এসেছি অসাধারণ ব্যাপার। আর এখন দুহাতের কাজও যথেষ্ট নয়। দুই হাত, দুই চোখ, দুই কান এবং মস্তিষ্ক—এই সব কটি মিলে একসঙ্গে তিন থেকে চার ধরনের কাজ চালিয়ে যেত না পারলে এই ডিজিটাল যুগে পিছিয়ে পড়তে হয়।

এখন তো তরুণদের হাতে হাতে স্মার্টফোন। ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ভিডিও গেম থেকে শুরু করে হাজার রকমের ডিজিটাল পদ্ধতি নিয়ে ওরা এখন দিনরাত ব্যস্ত। সারাক্ষণ মুঠোফোনের বোতাম টিপছে। অভিভাবকেরা চিন্তিত, মুঠোফোনে আকৃষ্ট হয়ে ওদের চোখ নষ্ট তো হবেই, এমনকি মাথাও নষ্ট হতে পারে। লেখাপড়ার তো বারোটা বাজবেই! কিন্তু বাস্তবে অবস্থা ততটা খারাপ নয়। এটা ঠিক যে নেশার মতো মুঠোফোনে আকৃষ্ট হলে কিছু ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু ভিডিও গেম বা এ ধরনের সফটওয়্যারে কিছু সময় ব্যস্ত থাকলে মস্তিষ্কের উন্নতিও হয়। বয়স্ক অভিভাবকেরা হয়তো অবাক হবেন।

ভিডিও গেম কীভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়
ফাইল ছবি

কিন্তু নেটজেন বা ইন্টারনেট জেনারেশন মহানন্দে বোতাম টিপে চলেছে। এতে তাদের মনের আনন্দ যেমন বাড়ে, তেমনি মস্তিষ্কের দ্রুত চিন্তাশক্তির সক্ষমতাও বাড়ে। কারণ, ভিডিও গেমে একসঙ্গে তিন থেকে চারটা অপশনের তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন ধরা যাক, এক তরুণ মজার ভিডিও গেম খেলছে। গভীর বনে সে হারিয়ে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। একদিক থেকে আসছে বাঘ, অন্যদিক থেকে সিংহ, পাশের জলাভূমিতে কুমির, গাছে সাপ ফণা তুলে আছে। প্রাণ রক্ষা করবে কীভাবে? তার হাতে শিকারের জন্য বন্দুক আছে। কিন্তু কার দিকে সে গুলি ছুড়বে? এই সময় তাকে একসঙ্গে কয়েকটা বিষয় হিসাব করতে হয়। বাঘ কাছে, না সিংহ? কুমিরটা কত দূরে? গাছের ডালে আশ্রয় নিলে সে কতটা সময় পাবে প্রাণ রক্ষায়? সেখানে আবার আছে সাপ। মনে মনে হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে বুদ্ধি করে আরেকটি উপাত্ত যোগ করে। কে কত দূর আছে এবং কোন দিক বিপদমুক্ত হলে সে দ্রুত নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারবে। বাঘ একটু দূরে, কিন্তু তার দিকে বন্দুক তাক করে গুলি করলে যে আওয়াজ হবে, তাতে সিংহ হয়তো ভয় পেয়ে সরে যাবে। এর সুবিধাটা হলো বাঘের দিকের অংশটা বিপদমুক্ত হলে তার নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এসব দিক বিবেচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেটা করতে হয় মুহূর্তের মধ্যে। তার মানে মস্তিষ্ককে একই সময়ে একাধিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। ভিডিও গেম খেলে এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের উপকার হতে পারে।

বেশির ভাগ গেমস তৈরি করা হয়েছে বিনোদনের জন্য
বেশির ভাগ গেমস তৈরি করা হয়েছে বিনোদনের জন্য

রুবিকস কিউব মেলানোর প্রতিযোগিতাও তরুণদের চিন্তাশক্তিকে সুতীক্ষ্ণ করে। মাত্র কয়েক মিনিটে রুবিকস কিউব মেলানো যে-সে কথা নয়। ঢাকারই এক তরুণ চোখ বন্ধ করে রেখে কয়েক মিনিটের মধ্যে রুবিকস কিউব মেলাতে পারে! এসব খেলার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ‘মাল্টিটাস্কিং অ্যাবিলিটি’ বা একই সময়ে একাধিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার সক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। ফলে, তরুণেরা পড়াশোনা থেকে শুরু করে যেকোনো জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক বেশি পারদর্শী হয়। সব বিষয় সে চৌকস হয়ে ওঠে। একজন কলেজছাত্রের দক্ষতা যাচাই করে দেখা গেছে, এ ধরনের চর্চার ফলে সে অন্যদের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি বিষয় মনে রেখে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়লে এই উপকারটুকু হয়তো পাওয়া যাবে না। আজকাল ইউরোপ-আমেরিকায় স্কুলের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে তিন থেকে চারটা কাজ করে থাকে। যেমন শিক্ষকের লেকচার শোনা ও প্রয়োজনীয় নোট লেখা, একই সঙ্গে ফেসবুক চেক করা, আবার কানে কর্ডলেস এয়ারফোনে গান শোনা। শিক্ষক সহজে ধরতে পারেন না, কারণ সব কাজই দক্ষতার সঙ্গে করে শিক্ষার্থীরা। এটা শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে।
স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা কি সবার সমান

করোনার একটি উপসর্গ হলো খাবারের গন্ধ বা স্বাদ কিছুই বুঝতে না পারা। অথচ সুস্থ অবস্থায় সে পোলাও-কোর্মা খুব মজা করে খায়। তাহলে করোনা হলে এই স্বাদ কোথায় যায়? আসলে স্বাদ থাকে, কিন্তু জিব সেটা টের পায় না। কারণ, স্বাদ গ্রহণের সূক্ষ্ম স্নায়ুকোষগুলো থাকে জিবে। করোনায় আক্রান্ত হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওগুলো সাময়িকভাবে অকার্যকর হয়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ পর অবশ্য স্বাদ আবার ফিরে আসে। জিবের স্বাদ গ্রহণের সক্ষমতার বিষয়টি খুব মজার। অনেক সময় জিব আমাদের বিভ্রান্ত করে। যেমন ডায়াবেটিসের রোগীদের অনেকে ডায়েট সোডা পান করেন, কারণ ওই পানীয়তে চিনি থাকে না। তাহলে মিষ্টি হয় কীভাবে? আর মিষ্টিই যদি হবে, তাহলে চিনি বা ওই জাতীয় কিছু ছাড়াই কীভাবে মিষ্টি হয়? আসলে ডায়েট সোডায় এমন একধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে, যাকে বলা যায় ‘কৃত্রিম চিনি’। এটা ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর নয়, কিন্তু জিবের স্বাদ গ্রহণের স্নায়ুকোষগুলোকে উজ্জীবিত করে। তখন জিব থেকে মস্তিষ্কে খবর যায়, পানীয়টা মিষ্টি। আমরাও নির্ভয়ে ডায়েট সোডা পান করি। বিশ্বজোড়া এর চাহিদা। আজকাল আমাদের অনেকেই ডায়াবেটিস না থাকলেও ডায়েট পানীয় বেশি পছন্দ করি। চিনিযুক্ত পানীয় ও ডায়েট সোডার মধ্যে পার্থক্য মানুষের জিব ধরতে পারে না। কিন্তু কিছু প্রাণী ঠিকই ধরতে পারে। যেমন ইঁদুর। মিষ্টিজাতীয় পানীয় ইঁদুর খুব পছন্দ করে। কিন্তু অবাক ব্যাপার, ওরা ডায়েট পানীয় পছন্দ করে না। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় দেখা গেছে। একটু চেখে স্বাদ নেয়, তারপরই চলে যায়। তার মানে শুধু অপছন্দ করে, তা-ই নয়, খাওয়ার অযোগ্য মনে করে। এ তো অভাবনীয়। যে ইঁদুর কাগজ-কাপড় কুচি কুচি করে কাটতে ওস্তাদ, যেকোনো খাবার খেতে যার জুড়ি নেই, সে কেন মিষ্টি ডায়েট পানীয় খেতে চায় না? এর কারণ কী? সাধারণ চিনি মেশানো পানীয় ও ডায়েট পানীয়—দুটিই তো সমান মিষ্টি, তাহলে ডায়েটে ইঁদুরের বিতৃষ্ণা কেন? বিষয়টি বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ইঁদুরের মুখে চিনির মিষ্টির স্বাদ গ্রহণের উপযুক্ত স্নায়ুকোষ রয়েছে। কিন্তু ডায়েট সোডায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের স্বাদ গ্রহণের সক্ষমতা তো নেই-ই, উপরন্তু ওই সোডা ইঁদুরের মুখে বিস্বাদ লাগে। তাই ডায়েট সোডা মানুষকে ফাঁকি দিতে পারলেও ইঁদুরকে ফাঁকি দিতে পারে না।

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here