রোবটের শিক্ষক মাকড়সা
সল্টিসিডি পরিবারের অন্তর্গত মাকড়সারা দীর্ঘ লাফ দেওয়ায় বেশ পারদর্শী। বিজ্ঞানীরাও তাদের লাফ দেওয়ার কৌশলের ওপর বিশেষ আগ্রহী। তাদের দেহের গঠন লাফিয়ে চলার জন্য উপযোগী। যেমন শরীর অনেক খণ্ডে বিভক্ত, ওজনে হালকা আর চোখের দৃষ্টিও প্রবল। সার্বিক চেহারা বেশ মায়াবী মনে হলেও শিকার ও আত্মরক্ষার জন্য তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাদের মতোই লাফ দিতে পারে। এক লাফেই তারা নিজের শরীরের দৈর্ঘ্য থেকে ছয় গুণ বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে। যেখানে মানুষ নিজের দৈর্ঘ্যের মাত্র ১.৫ গুণ বেশি দূরত্ব এক লাফে অতিক্রম করে। মানুষ শত অনুশীলনেও এত দীর্ঘ দূরত্বে লাফ দিতে পারবে না। আর মানুষ যা করতে পারে না, তা কম্পিউটারে বা রোবটকে দিয়ে করানোর একটা চেষ্টা লক্ষ করা যায়। এখানেও তাই।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী মাকড়সার এই বিশেষ শারীরিক দক্ষতাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলাকৌশলের মাধ্যমে রোবটের মাঝে স্থাপন করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা এ ক্ষেত্রে একধরনের রাজকীয় মাকড়সার প্রজাতিকে অনুসরণ করছেন, যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিডিপ্পাস রেজিয়াস। বিজ্ঞানীরা একে ‘কিম’ নামে ডাকেন।
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রাসেল গারউড, কিম মাকড়সার এই দীর্ঘ লাফের পেছনে গতিবিদ্যার প্রভাব লক্ষ করেছেন। এক লাফে ৩০ মিলিমিটার অতিক্রম করার সময় যে কোণে লাফ শুরু করে, ৬০ মিলিমিটার অতিক্রম করার সময় কৌণিক ডিগ্রির পরিবর্তন হয়। লাফ দেওয়ার সময় কিম মাকড়সার মাংসপেশি বিশেষভাবে সংকুচিত হয়, যা অন্য সাধারণ মাকড়সার থেকে আলাদা।
মাংসপেশির পাশাপাশি কাজ করে হিমোলিম্ফ (মাকড়সার দেহের বিশেষ ধরনের রক্তকে এই নামে ডাকা হয়)। ধারণা করা হয়, হিমোলিম্ফের হাইড্রোলিক বল মাংসপেশির সঙ্গে কাজ করে, যা তাকে উঁচুতে উঠতে সাহায্য করে। যদিও হিমোলিম্ফের অবদান এখনো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি।
মাকড়সার চোখও লাফাতে সাহায্য করে। মাকড়সার কিন্তু দু-একটি চোখ নয়, মাঝে দুটি বড় বড় চোখ, মাথার দুই পাশে আরও দুটি চোখ, আরও চারটি চোখ আছে মাথার ওপর ও পেছনে! এতগুলো চোখ দিয়ে চারদিক সতর্কভাবে দেখে তবেই পা বাড়ায় দীর্ঘ লাফের দিকে।
এখন প্রশ্ন হলো স্পাইডারবট আমাদের কী কাজে লাগবে? এখনকার সাধারণ রোবট কেবল মাটির ওপর নিরীহভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। কিছু কিছু হাঁটতে পারে ঠিকই, কিন্তু সামনে বাধা পড়লে তা ডিঙিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ওই জায়গাতেই অচল হয়ে পড়ে রোবট। আবার মানুষও সামনে বাধা এলে লাফ দিয়ে বেশি দূর যেতে পারে না। তাই বড় কোনো বাধা-বিপত্তি পার হয়ে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা জটিল কাজ রোবটকে দিয়ে করিয়ে নেওয়ার জন্য কিম মাকড়সাদের সাহায্য নিতে হচ্ছে।
তাদের লাফের মেকানিজম জানার জন্য চারপাশে বিজ্ঞানীরা বসিয়েছিলেন ত্রিমাত্রিক সিটি (কম্পিউটেড টমোগ্রাফি) স্ক্যান। তবে এত জটিল ইলেকট্রনিকসের কাজে গবেষকেরা এখনো পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেননি। তাই পরীক্ষা চালানোর আগেই ধ্বংস হয়ে যায় ত্রিমাত্রিক সিটি স্ক্যান সিস্টেমটি। তবে বিজ্ঞানীরা দমে যাননি, এখনো চলছে কঠোর গবেষণা। ভবিষ্যতে হঠাত্ ছোট ছোট দুর্দমনীয় স্পাইডারবট বা মাকড়সাবট আপনার দিকে লাফিয়ে লাফিয়ে তেড়ে এলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।