কাজল হেয়ার অ্যান্ড জেন্টস পার্লারের লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মার্চেন্ট হিসাব খোলা হয়। কিন্তু সেটা অনলাইনভিত্তিক ‘তিনপাত্তি গোল্ড’ নামে গেম খেলার চিপ বা ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচার অবৈধ টাকা লেনদেনে ব্যবহার হচ্ছে। গুলশানের ম্যাচিং ফেব্রিকস ও শাড়ি হাউজের তথ্য দিয়ে খোলা বিকাশ মার্চেন্ট হিসাবটি অনলাইন জুয়ার লেনদেনে ব্যবহার করেছেন দিনাজপুরে তন্ময় নামে এক ব্যক্তি।
এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা বেশ দীর্ঘ। মার্চেন্ট হিসাব খোলা হলেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের হয় অস্তিত্ব নেই, না হয় লেনদেনে ব্যবহার হয় না। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কাজল হেয়ার অ্যান্ড জেন্টস পার্লারের মার্চেন্ট হিসাবটির পরিচালনাকারী আবু তাহের কাজল। ওই হিসাব নম্বরে ফোন করলে আবু তাহের কাজলের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক নারী জানান, তাদের কোনো পার্লারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নেই। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জ¦ালানি তেলের দোকান রয়েছে তাদের। গেমস খেলার চিপস বিক্রির টাকা লেনদেন বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের অনলাইনে পণ্যের মূল্য পরিশোধের সেবা দিতেই মূলত বিকাশ মার্চেন্ট হিসাব খোলার সুযোগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানভেদে নামমাত্র মাশুল নিয়ে থাকে বিকাশ। অন্যদিকে এজেন্ট হিসাবে ক্যাশআউটে হাজারে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল নেয়। মূলত বিকাশের এ মাশুলের টাকা মেরে দিতেই অনেক এজেন্ট ক্যাশআউট করছে মার্চেন্ট হিসাবে যা বিকাশের বিধিবহির্ভূত বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মেহেরপুরে মোবাইল ব্যাংকিং কর্মীদের হাত ধরে চলছে অনলাইন জুয়ার রমরমা ব্যবসা। অনলাইন জুয়া থেকে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন সদর উপজেলার সাবেক বিকাশ কর্মী সজীব শেখ। তার মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। পুলিশ বলছে, হুন্ডির মাধ্যমে এসব টাকা রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে।
এর আগে সিআইডির তদন্তে উঠে আসে বিকাশসহ অন্যান্য এমএফএস প্রতিষ্ঠানের এজেন্টদের ‘ডিজিটাল হুন্ডি’ কারবারে জড়িয়ে পড়ার তথ্য। এ ছাড়া কর্মকর্তা পরিচয়ে গ্র্রাহককে ফোন করে নানা কৌশলে পিন নম্বর নিয়ে হিসাব থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ভিডিও গেমের ভার্চুয়াল মুদ্রা, অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেনে এমএফএস এজেন্টদের জড়িয়ে পড়া উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
অনলাইন গেমের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচায় বিকাশের ব্যবহার ছাড়াও একজনের নামে খোলা মার্চেন্ট হিসাব আরেকজন ব্যবহার করছে। ব্যবসায়িক লেনদেনে ব্যবহার না করে বিকাশ এজেন্টরা মার্চেন্ট হিসাব ব্যবহার করছে। এজেন্ট হিসাবে বিধিবহির্ভূতভাবে উচ্চহারে ৮৫ শতাংশের বেশি এম-টু-এ (মার্চেন্ট টু এজেন্ট) অর্থ স্থানান্তর ও মার্চেন্ট হিসাব থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন জেলার এজেন্ট হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করার তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। এজেন্টদের লেনদেন বিকাশ কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক তদারকি করে এবং মার্চেন্ট হিসাব নম্বরটি এজেন্টদের ব্যবহারের সুযোগ নেই বলে দাবি করেছে বিকাশ কর্তৃপক্ষ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন অবৈধ লেনদেন সহজ করে দিয়েছে। অনলাইন জুয়া বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে শুরু হওয়ার পর থেকে জুয়ার অ্যাপসে ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ের সঙ্গে আমাদের দেশের এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর নম্বর যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জুয়া খেলতে প্রয়োজনীয় ভার্চুয়াল মুদ্রা যা চিপস, গোল্ড কয়েনসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এগুলো কেনা একেবারেই সহজ হয়ে গেছে।
জানা যায়, বিটকয়েন কেনা-বেচার জন্য প্রয়োজন হয় ডলার। এসব ডলার সংগ্রহে বাংলাদেশে বেশকিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ‘পিটুপি’ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রাহকেরা খুব সহযে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের পেমেন্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় মাত্র ৫ মিনিটেও লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন গ্রাহকেরা। এরপর সেই ডলার ব্যবহার করে কেনা হয় বিটকয়েন সহ অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রাগুলো। বিনিয়োগ করার পরে বড় লোকসানে পড়লে দেশ থেকে ডলার চলে যায় বিদেশে। এভাবে প্রতিবছর দেশ থেকে ব্যাপকহারে ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে।