বাজারের বিভিন্ন কারবারী নিজেদের সেইসব ‘জমা করে রাখা ইথার কয়েন’ কমানোর সুযোগ পাবেন, যা তারা আর্থিক লাভ’সহ ফেরত পাওয়ার আশায় নেটওয়ার্কে জমা করে রেখেছিলেন।
ব্লকচেইনে পরিকল্পিত সংস্কার ব্যবস্থার মাধ্যমে অবশেষে তিন হাজার তিনশ কোটি ডলারের বেশি সমমূল্যের ইথারিয়াম ক্রিপ্টোমুদ্রায় প্রবেশাধিকার পেতে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে আসা এই নতুন সফটওয়্যার আপগ্রেডকে ডাকা হচ্ছে ‘শাপেলা’ নামে। এর মাধ্যমে বাজারের বিভিন্ন কারবারী নিজেদের সেইসব ‘জমা করে রাখা ইথার কয়েন’ কমানোর সুযোগ পাবেন, যা তারা আর্থিক লাভ’সহ ফেরত পাওয়ার আশায় নেটওয়ার্কে জমা করে রেখেছিলেন।
ব্লকচেইন বিশ্লেষক সাইট ‘ডুন অ্যানালিটিক্স’-এর তথ্য বলছে, সকল ইথারের জমা করা ১৫ শতাংশের বাজারমূল্য দাঁড়ায় তিন হাজার তিনশ ৭৩ কোটি ডলার।
‘ইথার স্ট্যাকিং’-এর সুবিধা দেওয়া কোম্পানি ‘অ্যাটেস্টান্ট’-এর প্রধান নির্বাহী শ্রিজিথ দাসের অনুমান বলছে, এই ব্লকচেইন সংস্কারের পরবর্তী সপ্তাহে ১১ লাখ ইথার পর্যন্ত উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। রয়টার্সের দেখা সর্বশেষ ইথার মূল্যের (এক হাজার আটশ ৬০ ডলার) ওপর ভিত্তি করে এর মূল্যমান গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারে।
ব্যবসায়ীরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, ইথারে এই আকস্মিক পরিবর্তন কীভাবে এর দামে প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ‘বিট্রু’র কৌশল প্রধান রবার্ট কোয়ার্টলি-জেনেইরো বলেন, এটা যাচাই করা অবশ্য জটিল।
“একটি বিষয় নিশ্চিত যে এটি সাংহাইয়ের অংশে কিছু সময়ের জন্য অস্থিরতা বয়ে আনবে।” –যোগ করেন তিনি।
ক্রিপ্টো বাজারের কয়েকটি অংশ শঙ্কিত যে, এই জমা করে রাখা ডিজিটাল মুদ্রা আনলক করলে উত্তোলনের মাত্রা ও বিক্রির স্রোত ব্যাপক হারে বাড়তে পারে। ফলে, এর দাম দ্রুত কমে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
ব্লকচেইন বিনিয়োগকারী কোম্পানি ‘ফিনেকিয়া ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রধান নির্বাহী বুনদিপ রাঙ্গারের তথ্য অনুসারে, এখনও জমা করা সকল ইথারের কেবল ২৯ শতাংশ ডলারের হিসাবে লাভে আছে।
এর মানে দাঁড়ায়, এর বেশিরভাগ টোকেনই লোকসানে বিক্রি হবে।
“এমনটি ঘটার সম্ভাবনা কম যে, বেশিরভাগ জমা করা ইথারই বিক্রি হয়ে যাবে।” –যোগ করেন তিনি।
‘ধাঁধার চূড়ান্ত অংশ’
২০২০ সালে এই ‘স্ট্যাকিং’ প্রকল্প শুরুর পর থেকে যেসব বিনিয়োগকারী আর্থিক লাভের আশায় ইথার জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের জন্য শাপেলা এক দীর্ঘ এক অপেক্ষার অবসান ঘটাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
গত বছর ‘মার্জ’ নামে এক বড় আপগ্রেডের মাধ্যমে ইথেরিয়াম নির্মাতারা এর পথ প্রশস্থ করেন। সে সময় ক্রিপ্টো মাইনিং বন্ধ করে ‘প্রুফ-অফ-স্টেক’ নামে পরিচিত ব্যবস্থায় পাড়ি জমায় কোম্পানিটি, যেখানে ব্লকচেইনে নতুন রেকর্ড পরীক্ষা ও জমা করা কয়েনের বাইরেও নতুন ইথার উপার্জনের প্রত্যাশায় ৩২টি ইথার কয়েন আটকে রাখেন ইথারের মালিকরা।
এই সপ্তাহের পরিকল্পিত সংস্কার কার্যক্রমের আগ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্তত ৩২টি ইথার (বর্তমান মূল্যের হিসাবে প্রায় ৬০ হাজার ডলার) জমা রাখার চেষ্টা করছেন, যা কোনো গড় খুচরা বিনিয়োগকারীর নাগালের বাইরে।
“সাংহাইয়ের ঘটনার আগে অনেক লোকজন ও প্রতিষ্ঠানই হয়ত নিজেদের ইথার জমা রাখার সিদ্ধান্ত নিতেন না। কারণ, একবার এমন করলে তাদের অর্থ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে যেত, যা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।” –বলেন ডিজিটাল সম্পদ ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কয়েনরুটস’র সিইও ডেভ উইজবার্জার।
এই আপগ্রেডের পর জমা করা ইথার আর ব্লকচেইনে আটকে থাকবে না। এর ফলে, বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি কয়েন জমা রাখার বিষয়ে আগ্রহী হতে পারেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
“দীর্ঘমেয়াদে ইথারের সংখ্যা বাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে সোলানা, ম্যাথিক ও অ্যাডা’র মতো ডিজিটাল সম্পদে সরবরাহের অংশ বিবেচনায় নিলে।” –বলেন ফিনেকিয়ার প্রধান নির্বাহী রাঙ্গার।
তবে, শাপেলা’র তৈরি বিভিন্ন পরিবর্তন অনুসরণ করে বিনিয়োগকারীরা কোন প্রক্রিয়ায় বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে?
“এটা সেইসব প্রতিষ্ঠানই হবে, যারা এতদিন পাশের লাইনে বসে নিরবে ধাঁধার চূড়ান্ত অংশ স্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছে। আর যাদের ইথার জমা রাখার আগে সেটি উত্তোলনের সুবিধার প্রয়োজন ছিল।” — বলেন ‘অ্যাটেস্টান্ট’-এর প্রধান নির্বাহী দাস।