স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ক্রমাগত ব্যবহারের কারণে মানুষের মস্তিষ্কের বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমছে বলে জানিয়েছেন নিউরোবিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী ওয়েন্ডি সুজুকি মুঠোফোনের কারণে মস্তিষ্কের বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমার কথা বলেন। স্মার্টফোনের আসক্তির কারণে মানুষের মস্তিষ্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখেছেন স্নায়ুবিজ্ঞানীরা। ক্রমাগত নোটিফিকেশন, লাইক-কমেন্টস আর নতুন নতুন বিষয় যেমন ছবি–শব্দ দেখা ও শোনার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কেন্দ্রে ডোপামিন তৈরি করে।

স্মার্টফোনে আসক্তি মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের নমনীয়তার ওপর প্রভাব তৈরি করে মানুষের সম্ভাবনাকে সীমিত করে দিচ্ছে। জীবনে আনন্দের সম্ভাবনাও সীমিত করে দেয়। বাস্তবে মানুষ সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের আনন্দ লাভ করে। তা বদলে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লাইক-কমেন্টসে আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন অনেকেই।

‘দ্য ডায়েরি অব সিইও’ নামের একটি পডকাস্টে মুঠোফোনে আসক্তি নিয়ে আলাপ করেন নিউরোবিজ্ঞানী ওয়েন্ডি সুজুকি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আসলে এক নয়। স্মার্টফোন আমাদের মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখছে। ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মস্তিষ্কের ওপর। স্মার্টফোনের ঘন ঘন ব্যবহারের কারণে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত উদ্দীপিত হয়। ক্রমাগত ডোপামিন নির্গত হয় আর দুশ্চিন্তার প্রতিক্রিয়া দেখায় মস্তিষ্ক।’

পডকাস্টে সুজুকি বলেন, ‘স্মার্টফোনের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতায় আমাদের স্নায়ুপথ বদলে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের বৃদ্ধির সম্ভাবনা হ্রাস পাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলছে। স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাপ আসক্তির জন্য তৈরি করা হয়েছে। স্মার্টফোনের ব্যাপক ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে জুয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়। সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে কয়েন ফেলা স্লট মেশিনের হাতল টানার মতো। হোম পেজে স্ক্রল করলেই সুন্দর ছবি দেখা যায়। একটু পরপরই আসে নোটিফিকেশন আর কমেন্টস। এতে ডোপামিন নির্গত হয়।

এমন নোটিফিকেশন, লাইক ও নতুন বিষয়ের ক্রমাগত উপস্থিতি মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টারে ডোপামিন নির্গত করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন ব্যবহারকারী এই উদ্দীপনার সঙ্গে পরিচত হয়ে ওঠেন। ফলে ঘন ঘন স্মার্টফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপ দেখার মতো আচরণ দেখা যায়। গবেষকেরা মনে করেন, স্মার্টফোন ব্যবহার সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করে। তরুণদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে। বিজ্ঞানী সুজুকি বলেন, শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করলে অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে দিনে সাত ঘণ্টার বেশি সময় ফোনে কাটাতে শুরু করে। তখনই তাদের উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বেড়ে যায়।

স্নায়ুবিজ্ঞানী সুজুকি স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাড়তি ব্যবহারের কারণে বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মাত্রা ব্যাপক হারে বাড়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘লাইক ও পোস্ট রিচের মতো হিসাবের তুলনা ও তাত্ক্ষণিক তথ্য কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ায় বলে মনে হয়। স্মার্টফোনের প্রতি উদ্বেগজনক আসক্তি আসলেই আমাদের প্রকৃত মানবমনের সংযোগ ধরে রাখার ক্ষমতাকে নষ্ট করছে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রকৃত মানব সংযোগের কোনো বিকল্প নেই।’

সুজুকি আরও বলেন, সামনাসামনি সামাজিক মিথস্ক্রিয়া মস্তিষ্কের মূল অঞ্চলকে সক্রিয় করতে পারে। ডিজিটাল মিথস্ক্রিয়ায় তা সক্রিয় হয় না। মস্তিষ্কের ইনসুলাসহ অনেক এলাকা সক্রিয় হয়। ইনসুলা মস্তিষ্কের ডান দিকের অংশ, যা কানের কাছে কর্টেক্সের গভীরে থাকে।

স্মার্টফোনের কারণে সহানুভূতি, মানসিক বুদ্ধিমত্তা ও গভীর সম্পর্ক তৈরির স্নায়ুপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানী সুজুকি ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল ডিভাইস স্বাস্থ্যকরভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি স্মার্টফোনের আসক্তি মোকাবিলা করার জন্য ও মস্তিষ্কের ভালোর জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেন। স্মার্টফোন থেকে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে ডিজিটাল ডিটক্স বা বিরতির পরামর্শ দেন এই বিজ্ঞানী। মুঠোফোন ব্যবহারের অভ্যাসগত আচরণ, যেমন ঘন ঘন ফোন দেখার অভ্যাস বদলানোর কথা বলেন তিনি। ডিটক্স বা কিছুটা বিরতি সময় কাটানোর জন্য বিকল্প উপায় তৈরি করতে পারে। শারীরিক কার্যকলাপের পাশাপাশি মানসিক চাপ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক মেজাজ বাড়ে এতে। তিনি বলেন, ব্যায়াম উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মাত্রা হ্রাস করে। ১০ মিনিটের হাঁটায় আপনার উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। সচেতনভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস শিথিলকরণের মাধ্যমে নিজেকে স্থির করতে পারে। তিনবার গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকে সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মনোযোগ দিয়ে ধ্যান করলে উদ্দীপনা খোঁজার পরিবর্তে বর্তমান মুহূর্তে উপস্থিত থাকার ক্ষমতা বাড়ে। আর মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়া আমাদের মানব–সংযোগ বিকাশ করে। মস্তিষ্ককে সুস্থ করতে প্রতিদিন চেষ্টা করা যেতে পারে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here