মানুষের মতো কম্পিউটারও কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। তবে কম্পিউটারের ভাষা মানুষের মতো নয়। প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করে কম্পিউটার। প্রোগ্রামিং ভাষার ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রাথমিকভাবে মেকানিক্যাল কম্পিউটারের তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রোগ্রামিং ভাষার যাত্রা শুরু হয়। আর তাই শুরুতে প্রোগ্রামিং ভাষাকে গাণিতিক স্বরলিপি বলা হতো। পরে ধীরে ধীরে কম্পিউটারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা চালু হয়। অনলাইন হিস্টরিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া অব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৪৫টি প্রোগ্রামিং ভাষার সন্ধান মিলেছে, যার মধ্যে ২৫০টি ভাষা বেশি প্রচলিত।
শুরুর আগের গল্প
১৮৪২ থেকে ১৮৪৯ সালের দিকে যুক্তরাজ্যের অ্যাডা লাভলেস ইতালীয় গণিতবিদ লুইগি মেনাব্রেয়ার একটি স্মৃতিকথা অনুবাদ করেন। সেখানে আধুনিক কম্পিউটারের জনক হিসেবে পরিচিত চার্লস ব্যাবেজের নতুন প্রস্তাবিত মেশিন অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের কথা উল্লেখ করা হয়। স্মৃতিকথার অনুবাদে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের মাধ্যমে বার্নোলি সংখ্যা গণনার পদ্ধতি নিজের মতো করে আলাদাভাবে উল্লেখ করেন অ্যাডা।
প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা
প্রথম কম্পিউটার কোড গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করা হয়। মার্কিন গণিতবিদ অ্যালোঞ্জো চার্চ ল্যাম্বডা ক্যালকুলাসকে ফর্মুলার মাধ্যমে প্রকাশ করতে ১৯৩৬ সালে কোড ব্যবহার করেন। ১৯৩৬ সালে তৈরি ট্যুরিং মেশিনও কোডে কাজ করত। ১৯৪০–এর দশকে প্রথমবারের মতো আধুনিক বৈদ্যুতিক কম্পিউটার তৈরি করা হয়। সীমিত গতি ও স্মৃতিক্ষমতা হওয়ার কারণে তখন প্রোগ্রামারদের হাতে প্রোগ্রাম লিখতে হতো। এ জন্য প্লাঙ্কালকুল নামের প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরির প্রস্তাব দেন কনরাড জুস। যদিও সেই ভাষা পরে তৈরি হয়নি। কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নকশা করা প্রথম কার্যকর প্রোগ্রামিং ভাষা ১৯৫০–এর দশকের শুরুর দিকে লেখা হয়। জন মাউচলি ১৯৪৯ সালে শর্ট কোড নামের ভাষা প্রস্তাব করেন। সেই ভাষা ছিল বৈদ্যুতিক কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা প্রথম উচ্চ স্তরের ভাষার মধ্যে একটি। শর্ট কোডে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম ভাষাটির কাজের গতি বেশ ধীর ছিল।
উচ্চমাত্রার ভাষা তৈরির সময় ১৯৫০–এর দশক
১৯৫০–এর দশকে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালিক গ্লেনি অটোকোড তৈরি করেন। এই ভাষাকে প্রথম সংকলিত প্রোগ্রামিং ভাষা মনে করা হয়। ১৯৫১ সালে কোরোডা বম পিএইচডি থিসিসের জন্য এই প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। ১৯৫৪ সালে আইবিএমের জন ব্যাকাসের নেতৃত্বে একটি দল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত উচ্চ স্তরের ভাষা হিসেবে ফরট্রান চালু করে (ফর্মুলা ট্রান্সলেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ ফরট্রান)। সেই সময় হার্ডওয়্যার বাজার দ্রুত বিকশিত হচ্ছিল, এর ফলে ফরট্রান ভাষা প্রোগ্রামারদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভাষাটির প্রথম ব্যবহারবিধি ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয়। ফরট্রান এখনো উচ্চমাত্রার কম্পিউটিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ভাষা হিসেবে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেস হপার আরেকটি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। তার নাম ফ্লো-ম্যাটিক। এই ভাষা ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ সালের দিকে ইউনিভ্যাক ১ কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা হয়। ১৯৫৫ সালের প্রথম দিকে গ্রেস হপার ও তাঁর দল ইংরেজি ভাষায় প্রোগ্রামিং ভাষার প্রোটোটাইপ তৈরি করেন। ফ্লো-ম্যাটিক ১৯৫৮ সালের প্রথম দিকে সর্বজনীনভাবে ব্যবহার হতে শুরু করে। ১৯৫৯ সালে কোবোল ভাষা চালু হয়। কমন বিজনেজ ওরিয়েন্টেড ল্যাঙ্গুয়েজ নামের এই ভাষা সাধারণ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়।
১৯৬০–এর দশক থেকে বর্তমান
১৯৬৪ সালে স্ট্যানলি কোহেন আরগন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে স্পিকইজি নামের একটি অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং পদ্ধতি চালু করেন। পরবর্তী সময়ে ম্যাটল্যাব, আইডিএল ও ম্যাথমেটিকা সেই পদ্ধতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়। সিমুলা নামের আরেকটি ভাষা ১৯৬০–এর দশকে চালু হয়। ১৯৬৯ সালে চার্লস মুর তৈরি করেন ফোর্থ। পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা সি প্রাথমিক সিস্টেম–ধর্মী প্রোগ্রামিং ভাষা। বেল ল্যাবসে কাজ করার সময় ডেনিস রিচি ও কেন থম্পসন ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে ভাষাটি তৈরি করেন। ১৯৭০ সালে স্মলটক, ১৯৭২ সালে প্রোলগ, ১৯৭৩ সালে এমএল নামের ভাষা চালু হয়। ইন্টারনেট যুগ আসার পরে ১৯৯০ সালে পাইথন, ১৯৯১ সালে ভিজ্যুয়াল বেসিক, ১৯৯৫ সালে জাভা, রুবি, ডেলফি ও পিএইচপি ভাষা চালু হয়।
সূত্র: উইকিপিডিয়া