বাংলাদেশে ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ই-কমার্স ও ফেসবুকভিত্তিক (এফ-কমার্স) উদ্যোক্তারা। ২৩ জুলাই রাতে দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড সেবা এবং আজ রোববার বেলা তিনটা থেকে মুঠোফোনে ফোর–জি ইন্টারনেট চালু হলেও দেশে বন্ধ রয়েছে ফেসবুকের ব্যবহার। অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাতের ব্যবসার প্রচারণা ফেসবুকনির্ভর হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই দুই খাতের কয়েক লাখ উদ্যোক্তা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স উদ্যোগ চালডাল ডটকমের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ছয়–সাত হাজার ফরমাশ (অর্ডার) পেয়ে থাকি। ইন্টারনেট না থাকার কারণে সেটা নেমে এসেছে দুই হাজারে, যা আমরা কল সেন্টারের মাধ্যমে গ্রহণ করেছি। আমাদের বেশি ভাগ ফরমাশ আসে মূলত ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এখন যত দ্রুত সবকিছুর সমাধান হয়, ততই ভালো।’
ই-কমার্স সাইট হোলসেল প্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হোলসেল প্লাসের মাধ্যমে চীন থেকে পণ্য কিনে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু ফেসবুক চালু না থাকায় তাঁরা পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের, যার প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর পড়তে পারে।’
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গত ১০ দিনে ক্ষতির পরিমাণ অনেক। কারণ, আমাদের এই খাতে জড়িয়ে আছে ই-কমার্স, এফকর্মাস, মার্কেটপ্লেস, ওয়েবসাইট, ডেলিভারি, কুরিয়ারসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। এ খাতে প্রায় ৫ লাখ উদ্যোক্তা ও ১৫ লাখ কর্মী রয়েছেন। ১০ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করা গেলেও ফেসবুক বন্ধ রয়েছে। এ খাতে ফেসবুকই একমাত্র মাধ্যম, যেখান থেকে ক্রেতা বেশি আসেন। আর তাই যত দ্রুত সম্ভব ফেসবুক চালু করতে হবে।’
ফেসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) ট্রাস্টের সভাপতি ও ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের উইয়ের ফেসবুক গ্রুপে ১৪ লাখের বেশি নারী যুক্ত রয়েছেন, যাঁদের সাড়ে ৪ লাখই উদ্যোক্তা। গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন একেকজন উদ্যোক্তা। ফলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিন ৬৭–৬৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেই আজ পণ্য বিক্রি করে আগামীকালের বাজার করেন। তাই অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের যতটুকু পারছি, সাহায্য করার চেষ্টা করছি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
ফেসবুক পেজ লাইভ শপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান বলেন, ‘আমরা মূলত ফেসবুক হকার। কারণ, আমরা ফেসবুক পেজে পণ্য দেখিয়ে আমাদের পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ থাকায় আমাদের পুরো ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। ফেসবুক চালু না হলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’
ফেসবুক পেজ ফ্যাশনীলের উদ্যোক্তা জাহেরা চৌধুরী ও সাম্মী ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফেসবুকেই পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু এটা বন্ধ থাকার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমি একা নই, আমার মতো অনেক উদ্যোক্তাই পড়েছে এই বিপদে। আমার এই কদিনে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেসবুক খুলে দিলে একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা যাবে।’