পড়াশোনার পাশাপাশি এই ৫ তরুণ গ্রামে বসেই ডলার আয় করছেন

0
174

কেউ এসএসসি পরীক্ষার্থী, কেউবা স্নাতক। আবার একজন দিনমজুরের কাজ করতেন। থাকেন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায়। পাঁচ জেলা থেকে এমন পাঁচজন ২৬ মার্চ এসেছিলেন ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে। এই পাঁচজনের মধ্যে মিল হলো—প্রত্যেকেই তথ্যপ্রযুক্তির নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ। মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন অনলাইনে। নিজের জেলায় বসে বিদেশি গ্রাহকের কাজ করে দেন। নিজের তো বটেই, কেউ কেউ সংসারের হালও ধরেছেন। এই দক্ষ পাঁচজন ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলেছেন। এই পাঁচজন ফ্রিল্যান্সার শুনিয়েছেন কাজ নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। তাঁদের সঙ্গে এসেছিলেন একজন প্রশিক্ষকও।

পেপ্যাল চালুর দাবি নাটোরের নিয়ামুলের

নাটোরের শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণিতে পড়েন মো. নিয়ামুল। ডিজিটাল বিপণনের কাজে দক্ষ তিনি। বাবা মোহাম্মদ হোসেন আলী প্রামাণিক কৃষক। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম মাধনগর একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কাজ করছেন নিয়ামুল। একসময় ল্যাপটপ কম্পিউার কেনার টাকাও ছিল না। মাটি কাটা থেকে শুরু করে ধান লাগানো, লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে করতে টাকা জমিয়ে কিনেছিলেন ল্যাপটপ। সেই ল্যাপটপ ব্যবহার করেন ঘরে বসে বিদেশের কাজ করার জন্য। এখন মো. নিয়ামুলের মাসিক আয় প্রায় আড়াই হাজার ডলার।

অনলাইনে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পাওয়ার জায়গা (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) ফাইভারে কাজ করেন নিয়ামুল। সেখানে তিনি একজন ‘টপ রেটেড’ ফ্রিল্যান্সার। নিয়ামুল বলেন, ‘আমার বাড়ি একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। এত দূর এসেছি নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে। আজ দক্ষ হয়েছি বলেই নিজ গ্রামে বসে লাখ টাকা রোজগার করতে পারছি। কখনো হতাশ হইনি। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করেছি। বাবার ঋণ পরিশোধ করেছি। এখন বেশ ভালো আছি। তবে একটা চাওয়া আছে, বাইরে থেকে আমাদের টাকা (পেমেন্ট) আনার জন্য পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হলে খুব ভালো হয়। আর গ্রামে উচ্চগতির ইন্টারনেট থাকলে আরও ভালো কিছু করতে পারতাম।’

এসএসসি পরীক্ষার্থী লালমনিরহাটের মো. সোহেল রানা সফল ফ্রিল্যান্সার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে মো. সোহেল রানা। সে একজন ডিজিটাল বিপণনকারী (মার্কেটার)। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে অনলাইনে। বাবা মজিবর রহমান একজন কৃষক। লালমনিরহাটের কর্ণপুর গ্রামে থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি আপওয়ার্ক, ফাইভআর মার্কেটপ্লেসে কাজ করছে। ওয়েব অ্যানালিটিকস ও ফেসবুক অ্যাডস নিয়ে কাজ করে। এই ছোট্ট বয়সেই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সোহেল রানা। মাসে আয় করছে প্রায় তিন হাজার ডলার। প্রথম আলোকে সোহেল রানা বলে, ‘আগামী মাসে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পাস করে জার্মানিতে পড়তে যেতে চাই আমি। পড়াশোনা শেষ করে আবার দেশে ফিরে এসে নিজ গ্রামে বসে কাজ করতে চাই।’
নিজের গ্রামের ছেলেমেয়েদের পেশাগত জীবনে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নও দেখে সোহেল রানা।

যশোরের রনি চান ফ্রিল্যান্সারদের কাজ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ুক

খুলনার সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন রনি হোসেন। বাবা জামিরউদ্দীন একজন কৃষক। রনি থাকেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার একটি গ্রামে। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভারে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ওয়েব অ্যানালিটিকস, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, গুগল ও ফেসবুক অ্যাডস নিয়ে কাজ করে এখন মাসে প্রায় এক হাজার ডলার আয় করেন তিনি। রনি হোসেন বলেন, ‘এখন শুধু কাজ করে যেতে চাই। নিজে একটা অবস্থানে পৌঁছালে তবেই অন্যদের সহযোগিতা করতে পারব। আমরা অনলাইনে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নানা রকম কাজ করি। এই বিষয়টা আশপাশের মানুষ বা আত্মীয়স্বজনের কাছে বোঝানো কঠিন হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে আরও বেশি প্রচারণা হওয়া উচিত।’

গ্রামে ইন্টারনেটের সমস্যা বেশি বলে মনে করেন গাইবান্ধার মিনহাজুল ইসলাম

গাইবান্ধার ভরতখালীতে বসে মিনহাজুল ইসলাম ওয়েব অ্যানালিটিকস নিয়ে কাজ করেন। তিনি গুগল অ্যাডস বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ। ফাইভআর ও আপওয়ার্কে কাজ করছেন, মাসিক আয় প্রায় এক হাজার ডলার। মিনহাজুলের বাবা মো. আবদুল মজিদ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা।
মিনহাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাড়ির বড় ছেলে হওয়ার কারণে এইচএসসি পাস করার পর স্নাতকে ভর্তি হই। কিন্তু পারিবারিক চাপে চাকরিতে ঢুকতে হয়। পরে পরীক্ষার সময় চাকরি থেকে ছুটি না পেয়ে পরীক্ষা দিতে পারিনি।’ এরপর ভরতখালীতে বসেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন মিনহাজুল। গ্রামে  ইন্টারনেটের সমস্যা বেশি বলে জানালেন তিনি। তাই কোনোভাবে বাইরের কাজগুলো সম্পন্ন করে দেন।

ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে না, এটাই বড় মাগুরার আলসানের কাছে

মাগুরার তরুণ সৈয়দ খমেনী আলসানও কাজ করছেন ওয়েব অ্যানালিটিকস ও গুগল অ্যাডস নিয়ে। মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ফাইভআর ও আপওয়ার্কেই কাজ করেন বেশি। আলসানের বাবা সৈয়দ সম্রাট সালমান একজন ব্যাটালিয়ন আনসার। সৈয়দ খমেনী আলসানের এখন মাসিক আয় এক হাজার ডলার। আর এ আয় করছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে বসেই।
সৈয়দ খমেনী আলসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজের বাড়ি বসেই কাজ করছি, আয় করছি, এটাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার। আমাকে ঢাকা ছুটতে হচ্ছে না। সামনে একটা দল করে কাজ করব নিজ এলাকায়।’

ঝিনাইদহের শামীম হুসাইন প্রশিক্ষণ দেন তরুণদের

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন ঝিনাইদহের শামীম হুসাইন। এখন থাকেন ঢাকায়। ১০ বছর করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এখন এক থেকে পাঁচ হাজার ডলার আয় করেন মাসে। শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এখন স্বপ্ন বাংলাদেশের আরও অনেক বেকার তরুণ–তরুণীকে তথ্যপ্রযুক্তির কাজে দক্ষ করে তোলা।’

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here