একসময় ফোন কেনার কথা উঠলেই সবাই একবাক্যে নকিয়া ফোনের নাম বলতেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল ফিনল্যান্ডের ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ২০০৩ সালে বাজারে আসা ‘নকিয়া ১১০০’ মডেলটি সারা বিশ্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে সারা বিশ্বের ফোনের বাজারের এক-তৃতীয়াংশই ছিল নকিয়ার দখলে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি হালনাগাদ না করায় ফোনের বাজারে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে নকিয়া।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ‘নকিয়া ৮১১০’ মডেলের ফোন বাজারে আনে নকিয়া। সে সময় বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি অফিস ও বাসায় টেলিফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বেশি ছিল। তবে সহজে বহন করার সুযোগ থাকায় ধীরে ধীরে টেলিফোনকে পেছনে ফেলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নকিয়ার ফোনটি। নকিয়ার ফোনগুলো ছিল মূলত ফিচার ফোন। আর তাই ফোনে স্পর্শনির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহারের আগপর্যন্ত নকিয়ার জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। এককথায় বলতে গেলে, ১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রায় ১৪ বছর একচেটিয়াভাবে ফোনের বাজারে শীর্ষ স্থানে ছিল নকিয়া।
স্পর্শনির্ভর প্রযুক্তি রীতিমতো বিপ্লব এনে দেয় মোবাইল ফোন শিল্পে। তবে এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বুঝতে বেশ দেরি করে ফেলে নকিয়া। তত দিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্পর্শনির্ভর প্রযুক্তির ফোন বাজারে নিয়ে আসে। ফোনগুলোতে বড় পর্দায় কাজের পাশাপাশি সহজে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ থাকায় সেগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে ব্যর্থ হয় নকিয়া ফোন। পরে বেশ দেরিতে এসব সুবিধা নিজেদের ফোনে যুক্ত করলেও আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রযুক্তি–বিশেষজ্ঞদের দাবি, মাইক্রোসফটের সঙ্গে নকিয়ার চুক্তি, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পিছিয়ে পড়ার কারণে নকিয়া প্রতিযোগিতামূলক ফোনের বাজার থেকে ছিটকে পড়েছে। নকিয়ার ফোনের বাজার কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা করতে না পারা। এসব দেশে নকিয়া ফোনের দাম অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় বেশি হওয়ায় ফোনের বাজার হাতছাড়া হয়ে যায় নকিয়ার। সহজ কথায় বলা যায়, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, উদ্ভাবনী শক্তি, বাজারমূল্য নির্ধারণ এবং আধুনিকায়নের অভাবে ফোনের বাজারে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে নকিয়া।