Home Technology সত্যিই কি চাকরির বাজার ধ্বংস করবে চ্যাটজিপিটি

সত্যিই কি চাকরির বাজার ধ্বংস করবে চ্যাটজিপিটি

0
104

ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া চ্যাটজিপিটি বটের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান যে প্রযুক্তি তৈরি করেছে, তা চাকরির বাজার ধ্বংস করবে না। গত শুক্রবার সাংবাদিকদের স্যাম অল্টম্যান বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঘিরে যে ভীতি ছড়িয়েছে, তা শান্ত করার লক্ষ্যে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন।

সম্প্রতি স্যাম অল্টম্যান তাঁর বিশ্বসফরের অংশ হিসেবে ফ্রান্সে এসে দেশটির নেতা ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, অনেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সতর্ক করে বলছেন, পুরো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সব খাতের কর্মীদের চাকরি খেয়ে ফেলবে। কিন্তু চ্যাটজিপিটির নির্মাতা এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ধারণা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই জায়গায় পৌঁছাবে, যেখানে মানুষের কোনো কাজ থাকবে না বা যে ধরনের উদ্দেশ্যে কাজ করবে, যেখানে মানুষ আগে কখনো কাজ করেনি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে লেখা খবর ছাপা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অল্টম্যানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চ্যাটজিপিটিকে সাংবাদিকের সহকারী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। একজন সাংবাদিকের ১০০ জন সহকারীর মতো নানা বিষয়ে তাঁকে গবেষণা করে বিভিন্ন ধারণা জোগাড় করে দিতে পারবে এই প্রোগ্রাম।

গত বছরের নভেম্বরে চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। বিভিন্ন রচনা, কবিতার লেখার পাশাপাশি সামান্য নির্দেশনা দিয়ে এর সঙ্গে আলাপচারিতাও করা যায়।

পরবর্তী সময়ে মার্কিন এই প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে কয়েক শ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে মাইক্রোসফট। এই প্রযুক্তি মাইক্রোসফটের বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় যুক্ত করে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হয় মাইক্রোসফটের। গুগল বার্ড নামে তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট উন্মুক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির ৩৮ বছর বয়সী উঠতি তারকা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা স্যাম অল্টম্যান লাগোস থেকে লন্ডন—যেখানেই যাচ্ছেন, নেতাদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন। তবে গত সপ্তাহে তিনি ইউরোপের নেতাদের ওপর বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ইউরোপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণের আসন্ন আইনের সঙ্গে তিনি মানাতে না পারলে ইউরোপ ছেড়ে দেবেন। পরে অবশ্য তিনি সে কথা থেকে সরে আসেন।

প্যারিসে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন প্যারিসে নতুন কার্যালয় খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। চ্যাটজিপিটির অন্যতম সফলতা হচ্ছে এটি ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের বক্তব্য লিখছেন। অনেকেই পরীক্ষায় পাস করছেন। অল্টম্যান বলেন, ‘এখন থেকে কয়েক বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নের বিষয়টি প্রতিফলিত হলে তা হবে বিশেষ কিছু। তবে আমি মনে করি, এটার ভীতি নিয়ে মানুষকে বোঝানো ক্লান্তিকর। আশা করি, এটা শান্ত হয়ে আসবে।’

২০১৫ সালে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। এতে অল্টম্যান ছাড়াও বিনিয়োগ করেছিলেন টুইটারের মালিক ইলন মাস্ক। ২০১৮ সালে ইলন মাস্ক এ প্রতিষ্ঠান ছাড়েন। এর পর থেকে তিনি চ্যাটজিপিটি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ইলন মাস্কের অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল। তিনি ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ওপেনএআই নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি অলাভজনক হিসেবে শুরু করলেও পরে তা করপোরেট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। মাইক্রোসফট এখন এটি চালাচ্ছে।

স্যাম অল্টম্যান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্বেগ নিয়ে বলেন, ‘এ খাতে যেসব ভীতি ছড়িয়েছে, তার অধিকাংশের সঙ্গেই আমি দ্বিমত পোষণ করি। তবে এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের সংঘাতের বিষয়টি আমি এড়িয়ে যেতে চাই। তাঁরা এখন যা করছেন, এর চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনের দিকে তাঁদের যেতে হবে।’

স্যাম অল্টম্যান বলেন, সমাজের মানুষের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য তাঁদের। তাঁরা চান, ভবিষ্যতে যন্ত্র একধরনের কাজের পরিবর্তে নানা ধরনের কাজ করবে।

স্যাম অল্টম্যানের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো তাঁরা কোথা থেকে তথ্য নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তা প্রকাশ করেননি। এ ছাড়া কপিরাইট আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য কে দায়ী হবে এবং কোনো বৈষম্যমূলক ওয়েবপেজ থেকে তথ্য নিয়ে কোনো উত্তর হাজির করা হলে এর দায়দায়িত্ব কার হবে, এসব কোনো নীতিমালা নেই বলে সমালোচকদের অভিযোগ।

অল্টম্যান বলেন, সমালোচকেরা জানতে চান চ্যাটজিপিটি নিজেই বৈষম্যমূলক কি না। তিনি এর উত্তরে বলেন, জিপিটি–৪ নামের যে সংস্করণ তাঁরা উন্মুক্ত করেছেন, এটি কোনো ধরনের বৈষম্য দেখায় না।
তথ্যসূত্র: এএফপি

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here