সেচের পানি সমবণ্টনে দেশীয় উদ্ভাবন
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে কৃষি খাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, কৃষি মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬ ভাগ জোগান দিয়ে থাকে এবং দেশের জিডিপিতে এর অবদান ১৪.১০ শতাংশ। তবে ডিজিটাল যুগেও এই খাত সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।
কৃষি খাতে সংকটের কারণ হলো অপর্যাপ্ত কৃষি প্রযুক্তি, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না জানা এবং নতুন উদ্যোগের ঘাটতি। এমন সংকট বিবেচনায় ডিজিটাল কৃষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কৃষি খাতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ওবায়দুর রহমান।
ইতোমধ্যে ওবায়দের উদ্ভাবিত একটি প্রযুক্তি কৃষি জমিতে সেচের পানি সমবণ্টন করে কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে।
ডিজিটাল কৃষি কাজে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নানা রকম প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তথ্যবিদ্যা, আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) এবং অন্যান্য উদ্ভাবনগুলো সেচ এবং অন্যান্য কৃষিভিত্তিক কাজগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ওবায়দের এই প্রযুক্তি কৃষি ফলন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনে, আর কৃষি খাতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে। এই স্মার্ট কৃষির মাধ্যমে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করা থেকে শুরু করে কৃষি কাজে ড্রোনের ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কৃষি কাজ করা সম্ভব। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্মার্ট সেচ প্রক্রিয়া।
নতুন এই উদ্ভাবন নিয়ে ওবায়দুর রহমান বলেন, একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদ পড়ে জানতে পারি রাজশাহীতে সেচের পানির অভাবে কৃষি কাজে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দুজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ব্যাপারটা আমাকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। আর আমাকে ভাবিয়ে তোলে যে এ যুগে এ কল্পনাতীত ঘটনার পেছনের কারণ কী হতে পারে।
তখন আমি গবেষণা করে এই সমস্যার আসল কারণ জানতে পারি যে, অসমবণ্টনের কারণে কৃষকরা সঠিকভাবে সেচের পানি পান না।
যদি এই পানি বণ্টনের পুরো প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করা যায় আর নিয়ন্ত্রণ একটি কেন্দ্রীয় স্থান থেকে করা যায় তবে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এই ভাবনা থেকেই আমার নিজ প্রযুক্তি উদ্যোগ টেকগারলিক লিমিটেড থেকে এই আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আমরা একটি ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইস বানালাম যার মাধ্যমে সেচের পানির স্বয়ংক্রিয় বণ্টন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে এ যন্ত্রের প্রথম পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সফলতা পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এ সমাধান ব্যবহার করে এখন আরও ৩৪টি পাম্পে (সেচযন্ত্র) কৃষকদের সেচ সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।