ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে মোবাইল সেট সহজলভ্য করার পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটকে সাশ্রয়ী করতে হবে।
তিনি বলেন, শুল্ক ও কর ফাকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশ থেকে মোবাইল সেট এনে বাংলাদেশের মোবাইল উৎপাদকের প্রচণ্ড ক্ষতি করা বন্ধ করতে হবে। এসব বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মন্ত্রী বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিটিআরসির সভাকক্ষে মোবাইল অপারেটর, মোবাইল উৎপাদন খাত এবং আইএসপিএবিসহ টেলিযোগাযোগ খাতের অংশীজনদের নিয়ে সাধারণের মধ্যে স্মার্ট ডিভাইস সহজলভ্যকরণ বিষয়ক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান। অনুষ্ঠানে বিটিআরসির কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসাইন এবং মোবাইল ফোন ইন্ড্রাস্ট্রি ওনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট রুহুল আলম আল মাহবুব বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসি‘র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ।
মোবাইল উৎপাদনে সরকারের সহযোগিতার বিভিন্ন দিক বর্ণনা করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইলফোন উৎপাদনের ভিত্তি তৈরি করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দেশে ১৫টি উৎপাদন কারখানা গড়ে উঠেছে এবং এসব কারখানায় উৎপাদিত মোবাইল ফোন দেশের মোবাইলফোনের চাহিদা মিটাতে সক্ষমতা অর্জন করছে। তিনি মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে মোবাইলের পাশাপাশি দেশে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এবং ট্যাব উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং এই ব্যাপারে যে কোন ধরণের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস ব্যক্ত করেন। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে মন্ত্রী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট ডিভাইস অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ -৯৯ অর্থবছরে কম্পিউটারের ওপর থেকে ভ্যাট ট্যাক্স প্রত্যাহার করে দেশে কম্পিউটার বিপ্লবের অভিযাত্রা শুরু করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় কম্পিউটার সাধারণের ক্রয় ক্ষমতায় আসে। ১৯৬৪ সালে দেশে কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হলেও এটি সাধারণের দোরগোড়ায় উপনীত হতে পারেনি। ১৯৮৭ সালে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা উদ্ভাবনের ফলে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হলেও সাধারণের কাছে কম্পিউটার ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
কম্পিউটারকেও আমরা স্মার্ট ডিভাইস হিসেবে দেখবো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার এরই মধ্যে সফটওয়্যার রপ্তানির মতো ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানির ক্ষেত্রেও প্রণোদনা দিচ্ছে। এর ফলে দেশে স্মার্ট ডিভাইস শিল্প যেমন বিকাশ লাভ করবে তেমনি পরোক্ষভাবে জাতীয় রপ্তানিতেও এই খাত বড় অবদান রাখবে। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম অনন্য একটি দৃষ্টান্ত। ভিয়েতনাম মোবাইলফোন রপ্তানি থেকে বার্ষিক ১৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব স্মার্ট মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সাধারণের জন্য সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট সংযোগের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এটি সহজলভ্য করতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নসহ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ কাজ করছে। তিনি স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেন।
বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান, সেমিনার থেকে প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শের আলোকে এ বিষয়ে একটি কার্যকর নীতিমালা তৈরি এবং সে আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ব্রডব্যান্ড প্যানিট্রেশন বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক সুফল, মোবাইল ফোন সকলের জন্য সহজলভ্য করতে করণীয়, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা, মোবাইল শিল্পের বিকাশে ট্যাক্স পলিসি, স্মার্ট হ্যান্ডসেটের উৎপাদন ব্যয় সহনীয় রাখার উপায় এবং বাংলাদেশের সাথে বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক্স বাজারের পার্থক্য ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।