যে ১০ কারণে আপনিও হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন

0
161

ইন্টারনেট এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত যোগাযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার, বিনোদনসহ নানা কাজে এর ব্যবহার বেড়েছে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অসচেতনতার কারণে বেশ কিছু বিষয়ে সাধারণ ভুল করেন অনেকেই, যেগুলোর কারণে যে কেউ হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন। যে ১০টি কাজ করলে আপনিও হ্যাকড হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন সেগুলো দেখে নেওয়া যাক—

১. যাচাই না করে অনলাইনে তথ্য দেওয়া

ই-মেইলে কোনো প্রতিযোগিতা বা র‍্যাফেল ড্রতে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ এলেই সেগুলোতে নিবন্ধন করেন অনেকেই। নামসর্বস্ব এসব প্রতিযোগিতা, র‍্যাফেল ড্রয়ের সত্যতা যাচাই না করে নিবন্ধন করলে ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ফোন নম্বর, ই–মেইলের ঠিকানা চলে যায় হ্যাকারদের দখলে। ফলে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়। এ বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান নাওট্রনের পণ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক রেনে কোলগা জানিয়েছেন, যেসব প্রতিযোগিতা বা র‍্যাফেল ড্রয়ের জন্য আপনি নিবন্ধন করেননি সেগুলোর জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক কোনো তথ্য দেবেন না। এমনকি অপরিচিত নম্বর থেকে আসা খুদে বার্তায় থাকা কোনো লিংকে ক্লিক করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

২. সন্দেহজনক ই-মেইল বা ফোনকল

অনেক সময় ব্যাংক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী পরিচয় দিয়ে ফোন করে ব্যক্তিগত তথ্য চায় হ্যাকাররা। এমনকি তথ্য পূরণের জন্য ভুয়া ই-মেইল এবং ওয়েব লিংকও পাঠায় তারা। এসব ভুয়া ই-মেইল বা ফোনকল পেয়ে সাড়াও দেন অনেকে। আপনিও যদি এ ধরনের ফোনকল বা ই-মেইলের উত্তর দেন, তবে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে সাবধান থাকার জন্য অবশ্যই অপরিচিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে৷ ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানেও সতর্ক থাকতে হবে।

৩. সব অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার

অনেকেই সহজে মনে রাখার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ই-মেইল ঠিকানা বা কম্পিউটারে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। এ অভ্যাসের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। কারণ, হ্যাকাররা একটি অ্যাকাউন্টের দখল নিলে সহজে অন্য অ্যাকাউন্টেরও দখল নিতে পারে। তাই প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. লোভনীয় ও অবিশ্বাস্য অফার

অনলাইনে বাজারদরের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি বা বিভিন্ন সুবিধার পাওয়ার অফার দেখলেই সেই ওয়েবসাইট বা লিংকে ক্লিক করেন অনেকে। আপনারও যদি এ অভ্যাস থাকে, তবে আপনি হ্যাক হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ, লোভনীয় ও অবিশ্বাস্য অফারের প্রলোভন দেখিয়ে অনলাইনে প্রতারণা করা হয়। তাই এসব অফারের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে হবে। আর্থিক লেনদেন ও ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানেও সতর্ক থাকতে হবে।

৫. সন্দেহজনক ভাষার ই-মেইল

অনেক সময় পরিচিত কারও ই–মেইল আইডি হ্যাক হলে তাঁর আইডি থেকে ই-মেইল আসতে পারে৷ এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই দ্রুত টাকা পাঠানো বা তথ্য জানানোর কথা বলা হয়ে থাকে। তাই পরিচিত কারও আইডি থেকে সন্দেহজনক ভাষায় ই-মেইল আসলে সতর্ক থাকতে হবে। এসব ই-মেইলে কোনো তথ্য চাইলে বা লিংকে ক্লিক করার নির্দেশনা থাকলে এড়িয়ে যেতে হবে।

৬. দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার

দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কারণে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বাড়ে। তাই সহজে মনে রাখা যায়, এমন ছোট আকারের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের নাম বা জন্মতারিখ দিয়েও পাসওয়ার্ড তৈরি করা ঠিক নয়। নিয়মিত বিরতিতে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে।

৭. যেকোনো ব্যক্তি হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন

অনেকেই মনে করেন, আমার তো তেমন পরিচিতি বা ব্যবসা নেই। ফলে সাইবার অপরাধীরা আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করবে না। আপনিও যদি এমনটি ভেবে থাকেন তবে ভুল করছেন। কারণ, অনলাইনে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন। শুধু বিখ্যাত বা ধনী ব্যক্তিরা হ্যাকিংয়ের শিকার হবেন, এমন তথ্য ঠিক নয়। তাই অনলাইনে নিরাপদ থাকতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

৮. অ্যাপ ও অপারেটিং সিস্টেম হালনাগাদ না করা

অনেকেই কম্পিউটার এবং ফোনে অপারেটিং সিস্টেম বা অ্যাপ  নিয়মিত হালনাগাদ করেন না। হ্যাকিং থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই কম্পিউটার এবং ফোনে হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। কারণ, হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার এবং সফটওয়্যারের নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী থাকে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সাইবার হামলার আশঙ্কা থাকলে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার পাশাপাশি হামলা প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।

৯. পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার

রেস্তোরাঁয় ঢোকার পরপরই অনেকে ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিনা মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকায় ইচ্ছেমতো অনলাইনে ঢুঁ মারেন তাঁরা। কিন্তু পাবলিক ওয়াই-ফাইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা তেমন উন্নত থাকে না। ফলে হ্যাকাররা খুব সহজেই এসব ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবহার করে সাইবার হামলা চালাতে পারে। অনেক সময় হ্যাকাররা কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্থানের নাম দিয়ে আলাদা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক চালু করে। ফলে ব্যবহারকারীরা নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ই-মেইল ঠিকানায় প্রবেশের জন্য অ্যাকাউন্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড লিখলেই সেগুলো চলে যায় হ্যাকারদের দখলে। আর তাই পাবলিক ওয়াই–ফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

১০. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত রাখা

অনেকে ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি তথ্যও নিয়মিত পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অবস্থানের তথ্যসহ জন্মদিন, জন্মের সাল, ফোন নম্বর, ই–মেইল ঠিকানাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য পোস্ট করেন তাঁরা। এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে পাসওয়ার্ড জেনে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্রতারণা করতে পারে হ্যাকাররা। আর তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here