এই সময়ে সুখী জীবনযাপনের ১০ ‘অ্যারিস্টটলীয় উপায়’

0
134
খুলনাতে পলিটেকনিক/ডিপ্লোমা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট ট্রেনিংHAMKO_Future_Tech_Academy

অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, “ভাগ্যক্রমে সুখ পাওয়ার চেয়ে যদি নিজের পরিশ্রমের ফলাফল হিসেবে সুখ অর্জন করা যায়, তাহলে এটা ধরে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত যে এভাবেই সুখকে জয় করা যায়।“ অ্যারিস্টটল যেসব গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছিলেন, আধুনিক গবেষণায়ও দেখা গেছে যে সেগুলো সুন্দর চেতনাবোধ তৈরি করে।

জীবনে সুখের সন্ধান করছেন এমন মানুষের সংখ্যা হয়তো গুনে শেষ করা যাবে না। যাপিত জীবনে সুখের স্পর্শ পেতে জীবনের অনেকটা সময় মানুষ সুস্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার গোপন মন্ত্রের খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু ইতিহাসজুড়ে অনেক বিজ্ঞ পণ্ডিত-ঋষিরা বলে গিয়েছেন, এটা একটা ভুল উপায় যে লোকে সুখের মন্ত্র অন্বেষণ করে। তাদের ভাষ্যমতে, সুখ আসলে খুঁজে পাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়; বরং সুখকে নিজের জীবনে নিয়ে আসতে হয়।

আর এই দ্বিতীয় পদ্ধতিটির সবচেয়ে বিখ্যাত প্রবক্তা বলা যায় গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলকে। তিনি সুখকে ‘ইউডেমোনিয়া’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, যার অর্থ ‘গুড স্পিরিট’ বা ভালো চেতনা। আধুনিক যুগের অনেকের কাছে হয়তো এটা কল্পনাবিলাসী একটা ব্যাপার মনে হতে পারে, এখন আপাতদৃষ্টিতে ‘সুখ’ বলে প্রতীয়মান হওয়া কোনো জিনিসের পেছনেই ছোটে মানুষ।

কিন্তু অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, সুখ এমন একটি স্বর্গীয় অনুভূতি যা আমাদের সবার কাছেই আসবে, কিন্তু আমাদের শুধু দরজাটা খোলা রাখতে হবে- আর সেটা করতে হবে ভালো জীবনযাপনের মাধ্যমে।

আর ভালো জীবনযাপন করতে চাইলে আমাদের কিছু গুণ আয়ত্তে আনতে হবে এবং সেগুলোকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। অ্যারিস্টটল তার ‘নিকোমেকিয়ান এথিকস’ বইতে লিখেছিলেন, “ভাগ্যক্রমে সুখ পাওয়ার চেয়ে যদি নিজের পরিশ্রমে ফলাফল হিসেবে সুখ অর্জন করা যায়, তাহলে এটা ধরে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত যে এভাবেই সুখকে জয় করা যায়।” 

অ্যারিস্টটল যে ১০টি গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছিলেন, আধুনিক গবেষণায়ও দেখা গেছে সেগুলো ভালো চেতনাবোধ তৈরি করে; এগুলো হলো:

১. সাহস  

অ্যারিস্টটল একজন ব্যক্তির নিজের জীবন উৎসর্গ করার ইচ্ছার (যেমন, যুদ্ধ চলাকালে) পরিপ্রেক্ষিতে সাহসের কথা বলেছিলেন। আধুনিক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এটাকে গুণ হিসেবে ধরতেন কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ক্যান্সেল কালচার’ এর স্বীকার হওয়ার ভয় সম্পর্কে তার মতামত কী হতো কে জানে! কিন্তু ভয়ের উৎস কী- সেটা মূল প্রশ্ন না, প্রশ্ন হচ্ছে ভয়কে জয় করার মতো সাহস থাকলে তা মানুষকে সুখ দেয় কিনা।

আর গবেষণায় দেখা গেছে, এর সঙ্গে সুখের একটি যোগসূত্র রয়েছে। পণ্ডিত ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা এও বলেছেন, প্রতিকূলতার পরে সাহসই একজন মানুষকে সহনশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, আর সেই সহনশীলতাই সুখের দিকে ধাবিত করে।

২. আত্মসংযম

এর মাধ্যমে অ্যারিস্টটল বুঝিয়েছেন, নিজের চাহিদা ও আবেগের ক্ষেত্রে সংযমী হওয়া শিখতে হবে। হিপ্পিদের মূলমন্ত্র ‘যদি কোনো কাজ করতে তোমার ভাল লাগে, তাহলে সেটা করো’-কে দুর্দশার প্রধান রেসিপি হিসেবে উল্লেখ করেছেন! আধুনিক গবেষকরাও অ্যারিস্টটলের পরামর্শের সঙ্গে একমত তবে একটা টুইস্ট রেখেছনে তারা।

৩. উদারতা

এই গুণটির মাধ্যমে অ্যারিস্টটল রাজনৈতিক চিন্তার উদারতার কথা বোঝাননি, বরং তিনি টাকার বিষয়ে উদারতার কথা বুঝিয়েছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, তিনি কৃপণতা পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে অযৌক্তিকভাবে নয়।

কৃপণতা যে মানুষের ভালো থাকার উপর প্রভাব ফেলে তা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে তিনজন অর্থনীতিবিদ একটি বার্গেইনিং গেম চালু করেছিলেন যেখানে অংশগ্রহণকারীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ভাগ করে নিতে বলা হয়েছিল।

একজন সেই প্রস্তাব দেবে, আর অন্যজন চাইলে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলতে পারবে; আর ‘না’ বললে দুজনের কেউই কোনো টাকা পাবেনা। অর্থাৎ, কম পরিমাণ টাকার প্রস্তাব দিলে সেটা বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে পারে। লেখকেরা দেখেছেন, ৪০ শতাংশের কম পরিমাণ টাকার প্রস্তাব দেওয়াতে দর কষাকষির সময়টায় দুই পক্ষের মধ্যেই শারীরিক চাপ ছিল অনেক বেশি।

৪. মহত্ত্ব

উদারতার সাথেই আরও যে বিষয়টি জড়িয়ে, তাকে অ্যারিস্টটল বলেছেন ‘মহত্ত্ব’। এর মানে, একজন ব্যক্তির মধ্যে কোনো কাজ সস্তা উপায়ে নয়, বরং কাজটা কত চমৎকারভাবে এবং আদর্শ উপায়ে করা যাবে- সেই চিন্তা থাকতে হবে।

অ্যারিস্টটল এটা বোঝাননি যে সুখে থাকার জন্য কাউকে বিলাসবহুল ইয়াট কিনতে হবে; তিনি বরং ‘মহত্ত্ব’ বা আড়ম্বর বলতে বুঝিয়েছেন এমন কিছু করা যাতে অনেক লোকের উপকার হয়।

বর্তমানে আমরা হয়তো এটাকে ‘বদান্যতা’ বলে অভিহিত করবো, অর্থাৎ যতটা সম্ভব দানশীল হওয়া। কিন্তু এই কাজের বিনিময়েই যে অনুভূতি পাওয়া যাবে সেটাই সুখ।

৫. মহানুভবতা

আমরা হয়তো প্রায়ই কোনো ব্যক্তির প্রসঙ্গে বলে থাকি- ‘তার আত্মা বড়’; অর্থাৎ তিনি একজন মহানুভব ব্যক্তি। অ্যারিস্টটলের মতে, একজন উদারচিত্তের-মহানুভব ব্যক্তি হবেন তার পূর্বসূরি গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের মতো, যিনি ‘সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করতেন’।

আপনার মন অনেক বড় ও মুক্ত হতে হবে; এর জন্য নয় যে আপনি ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝেন না, বরং আপনাকে চিন্তা করতে হবে আরও গভীরে গিয়ে যা জাগতিক আনন্দ-বিলাসের বাইরে। আর ‘নিকোমেকিয়ান এথিকস’ অনুযায়ী বলতে হবে, ‘সোশ্যাল মিডিয়াকে দূরে সরিয়ে রেখে বই পড়ুন’।

৬. নম্রতা

সবার প্রতি দয়ালু হওয়া এবং নিজের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে এই গুণ আয়ত্ত করা যাবে। আর নম্রতার বিপরীত রূপ হলো আগ্রাসন, যা মানুষের ভালো থাকাকে কঠিন করে তোলে এবং মানুষ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হিমশিম খায়।

গবেষকরা এটি পরীক্ষা করে দেখেছেন: তারা মানুষকে বলেছিলেন এমন কারো কথা ভাবতে যাকে তারা ঘৃণা করেন অথবা সহিংস কিছুর কথা ভাবতে অথবা নিরপেক্ষ চিন্তা করতে। গবেষকরা দেখেছেন, আগ্রাসী চিন্তার অধিকারীরা প্রথমেই বীভৎস কিছুর চিন্তা করেছেন এবং বাকিদের চেয়ে তাদের সুস্থতাও কম ছিল।

৭. নিজের সম্পর্কে সৎ থাকা

অ্যারিস্টটল সততার উপর সবচেয়ে জোর দিয়েছেন। তিনি ‘অতিরঞ্জন দেখানোর ভণ্ডামি’, দম্ভ এবং নিজেকে অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। অন্যভাবে বলা যায়- তিনি এমনভাবে বিনয়ী হতে বলেছেন, যার মাধ্যমে নিজেকে চেনা এবং নিজের মিথ্যা প্রশংসা কিংবা নিজেকে অবমূল্যায়ন না করেও অন্যদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করা সম্ভব।

নিজেকে ছোট না করে নম্র হতে জানলে হতাশাও কম থাকে নেতিবাচক চিন্তা আসার মাত্রা কমে যায়, সেইসঙ্গে জীবনের প্রতিও ভালোবাসা আসে। কিন্তু গবেষণায় এও দেখা গেছে, অতিরিক্ত আত্ম-সমালোচনা এবং অনিরাপত্তায় ভোগার সঙ্গে উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতার যোগসূত্র রয়েছে।

৮. সাম্যভাব

আধুনিক সমাজে এই শব্দটিকে কেন্দ্র করে প্রচুর বিতর্ক হয়। ন্যায্যতা বৃদ্ধি এবং অতীতের বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টার সঙ্গে এটি জড়িত। আর কেউ যখন উপলব্ধি করে যে তার সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা হচ্ছে না, তখন তাদের আনন্দ ও ভালো থাকার ক্ষমতা কমে যায়।

তবে অ্যারিস্টটল বিষয়টিকে একেবারে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন- ‘একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হলেন তিনি, যিনি অভ্যাস ও নিজ ইচ্ছাবশতই অন্যায়ভাবে নিজের অধিকার চেয়ে বসেন না, বরং ন্যায্য পাওনার চেয়ে কম পেয়েও তিনি সন্তুষ্ট থাকেন।’ এই মনমানসিকতাকে তিনি ‘একটা বিশেষ ধরনের ন্যায়বিচার’ বলে উল্লেখ করেছেন।

৯. ক্ষমা

অ্যারিস্টটল বাকি গুণাবলীর কথা বিবেচনা করে এই গুণটির কথা উল্লেখ করেছেন। সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে, এর মাধ্যমে আমরা বুঝি অন্যের প্রতি সদয় হওয়া, অন্যের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হওয়া বা অমায়িক হওয়া।

কিন্তু  এই গ্রিক দার্শনিক আরও চতুরভাবে এটি ব্যাখ্যা করেছেন: অন্যের ভুলের প্রতি ক্ষমাশীল ও সহনশীল হওয়া। গবেষণায়ও দেখা গেছে, ক্ষমাশীল হওয়ার চর্চা করলে, নিজের ইচ্ছায়ই অভিযোগ বা ক্ষোভ প্রকাশ থেকে বিরত থাকলে হতাশা কমে এবং উদ্বিগ্নতা প্রশমিত হয়।

১০. পরিমিতি বোধ 

আধুনিককালে অনেকেই এর মানে বলতে বোঝেন বিনয়ী হওয়া। কিন্তু অ্যারিস্টটল এটিকে ‘লজ্জাজনক আচরণ থেকে বিরত থাকা’কে বুঝিয়েছেন, এমনকি ব্যক্তিগত পরিসরে আচরণের ক্ষেত্রেও। এটাকে সংযমের আরেক রূপও বলা যায়, কিন্তু এখানে বাড়তি হলো- আমাদেরকে বদঅভ্যাস থেকেও বিরত থাকতে হবে।

অ্যারিস্টটলের ভাষ্যে, নিন্দনীয় কাজের চিন্তা মাথায় এলেও যার নিজের কাছে লজ্জা লাগবে, তার মধ্যেই পরিমিতি ভাব আছে বলা যায়। অর্থাৎ, আপনার এই বিশ্বাস থাকতে হবে যে, এটা খারাপ কাজ এবং সৎ থাকার জন্য এর থেকে দূরে থাকতে হবে।

এরকম চিন্তা মানুষের জীবনে সুখ বয়ে আনার একটা কৌশল। মানুষ যেসব কাজকে নৈতিক বলে ভাবে তা করার মাধ্যমে সে সুখ পায়, আর এর অনৈতিক কাজ করলেই সুখের বিপরীত অনুভূতিটা হয় তাদের।

যদিও অ্যারিস্টটল দুই সহস্রাব্দেরও আগে এই গুণাবলীর কথা বলেছিলেন, কিন্তু আজও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য একটা ভালো চেকলিস্ট হিসেবে কাজ করবে এটি। যদিও এগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করা অনেকের জন্যই কঠিন হতে পারে। কিন্তু যদি এই অভ্যাসগুলো গড়ে ওঠে তাহলে সুখী জীবন কাটানো অসম্ভব কিছু নয়।        

Hamko ICT Ltd. is a Bangladeshi tech company having primarily focused on software development service in home and abroad. HAMKO_ICT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here