চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অ্যাপলের ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা পিসি বিক্রি কমেছে ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। অ্যাপলসহ অন্যান্য পিসি নির্মাতা কোম্পানিরও বিক্রিতে বড় আকারের ধস নেমেছে। ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে সার্বিক পিসি বিক্রি ২৯ শতাংশ কমে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সর্বনিম্ন। মহামারীকালীন বাসা থেকে কাজ ও ক্লাসের কারণে পিসির চাহিদা সর্বোচ্চে পৌঁছালেও তা ধীরে ধীরে কমছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ প্রান্তিকে বৈশ্বিক পিসি বিক্রি কমল।
শীর্ষ পিসি বিক্রেতা কোম্পানি লেনোভো ও ডেলের পিসি বিক্রি ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে। এইচপির বিক্রি কমেছে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। কোনো বৃহৎ ব্র্যান্ডই শ্লথগতি এড়াতে পারেনি। আসুসটেকের বিক্রি ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ কমায় শীর্ষ পাঁচের বাইরে চলে গেল তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানিটি।
আইডিসি বলছে, নিকট ভবিষ্যতেও পিসি বিক্রিতে শ্লথগতি বহাল থাকবে। বিশ্ব অর্থনীতির গতি ফিরলে হয়তো বছরের শেষের দিকে চাঙ্গা হতে পারে পিসি বাজার। এ বাজারে বড় একটি ধাক্কা দেবে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ১১।
আইডিসির বিশ্লেষক লিন হুয়াং বলেন, ‘২০২৪ সালের শুরুতে ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজ ১১-তে মজবে।’ গত বছর ভোক্তা ব্যয় কমার প্রভাব পড়েছে স্মার্টফোন বিক্রিতেও। ২০২২ সালে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রিতেও দুই অঙ্কের সংকোচন হয়েছে। এতে শীর্ষ চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলোর আয়ে পতন হয়েছে। ফলে চিপ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসকে হাইনিকস, মাইক্রন ও স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানি। প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক পিসি বিক্রিতে বড় আকারের পতনের ফলে সেমিকন্ডাক্টর খাত আরো ধাক্কা খাবে। অ্যাপলের বিক্রি হ্রাসের পেছনে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার উত্তেজনার ভূমিকা রয়েছে। সরবরাহ চেইন সংকট এড়াতে চীনের বাইরে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক পিসি বিক্রি ২৮ শতাংশ কমেছে। গার্টনার বলছে, পিসি বিক্রি কমেছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ক্যানালিসের উপাত্তে ২৯ শতাংশ বিক্রি কমার দাবি করা হয়। ২০২২ সালে পিসি বিক্রি ২০২১ সালের তুলনায় কমেছে ১৬ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের মতো গত বছরের শেষ প্রান্তিকও কোনো পিসি নির্মাতার জন্য ভালো যায়নি। সব কোম্পানিই লোকসান কমানোর চেষ্টা করলেও শীর্ষ তিন কোম্পানি দুই অংকের লোকসান গুনেছে। গার্টনারের প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্থ প্রান্তিকে অ্যাপলের বিক্রি কমেছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ। ক্যানালিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক জায়ান্টটির বিক্রি কমেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। শীর্ষ তিন পিসি নির্মাতা কোম্পানির মধ্যে ডেল সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ লোকসান গুনেছে। এইচপি ও লেনোভোর বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ২৯ ও ২৮ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক যে পিসি নির্মাতাদের জন্য ভালো যাবে না তার ইঙ্গিত গত বছরই পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে পিসি বিক্রি হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ ছিল সংশ্লিষ্টদের। বছরের শেষ অংশে সাধারণত বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় বিভিন্ন কোম্পানি। ছুটির মৌসুমের কেনাকাটা কিংবা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন অফার সত্ত্বেও চাঙ্গা করা যায়নি পিসি খাত। গার্টনার বলছে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি উপাত্ত রাখা শুরুর পর চতুর্থ প্রান্তিকে সর্বনিম্ন বিক্রি হয়েছে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও আসন্ন অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কায় ভোক্তারা কম দরকারি পণ্য ক্রয় কমিয়ে দিয়েছেন।