ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ছোঁয়া

হয়রানি, ভোগান্তি, দুর্নীতি ইত্যাদি বন্ধে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম শুরু করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ধীরে ধীরে ভূমি ব্যবস্থাপনার সবকিছুই নিয়ে আসা হচ্ছে অনলাইনে। ফলে ঘরে বসেই অনলাইনে জমির নিবন্ধন, নামজারি, খাজনাসহ সব ধরনের কাজ করা যাচ্ছে। এতে সময়, শ্রম এবং খরচ—সবই সাশ্রয় হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী ভূমি ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—

ই-নামজারি

বর্তমানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ই-নামজারি ও মিসকেস মামলার শুনানি গ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম দেশব্যাপী পুরোপুরি চালু হলে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ লাখ নামজারি সহজেই করা যাবে। ফলে বছরে এক কোটির বেশি মানুষ এই সেবার আওতায় আসবে।

মৌজা ও প্লটভিত্তিক ভূমি জোনিং

মৌজা ও প্লটভিত্তিক ভূমি জোনিং সুবিধার মাধ্যমে ভূমির অবস্থান ও ধরন অনুযায়ী প্লটভিত্তিক কৃষি, আবাসন, বাণিজ্যিক, পর্যটন ও শিল্প উন্নয়ন ইত্যাদি বিভাগে ভাগ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে সারা দেশে কৃষিজমি রক্ষা করা সম্ভব হবে। শুধু তা–ই নয়, মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং ম্যাপ ও ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি সারা দেশে মৌজা ও প্লটভিত্তিক তথ্যভান্ডারও তৈরি করা হবে।

ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে খতিয়ান

জমির খতিয়ান সংগ্রহে হয়রানি কমাতে ডিজিটাল রেকর্ড রুম চালু করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ২১টি জেলায় এই রেকর্ড রুম চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এটি চালু হবে। অনলাইনে খতিয়ান প্রদানের সঙ্গে খতিয়ানের অটোমেটেড সার্টিফায়েড কপিও দেওয়া হবে।

৬১ জেলার খতিয়ান অনলাইনে

দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলার সিএস, এসএ, আরএস ও দিয়ারা জরিপের মোট চার কোটির বেশি খতিয়ান অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলোতেও ডিজিটাল রেকর্ড রুম চালু করা হবে।

অনলাইনে খাজনা

অনলাইনভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর-ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকেই জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) দেওয়ার সুযোগ চালু করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম পর্যায়ে ৮টি জেলার ৯টি উপজেলার ৯টি পৌর বা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ১৯টি মৌজায় এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ সুবিধা চালু করা হবে।

ভূমি ডেটা ব্যাংক

সারা দেশের সরকারি সম্পত্তি নজরদারির আওতায় আনতে ‘ভূমি ডেটা ব্যাংক’ তৈরি করা হচ্ছে। এতে সরকারি সম্পত্তির অবৈধ ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। শতভাগ খাসজমি চিহ্নিত করার পাশাপাশি অর্পিত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি ও সায়রাত মহালের তথ্যভান্ডার তৈরি করে ভূমি তথ্য ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হবে।

ভূমিমালিকদের স্মার্ট কার্ড

জমির মালিকদের জমিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নিয়ে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কার্ডে ভূমির মালিকানার সব ডিজিটাল তথ্য থাকবে। ভূমি ব্যবহার ও মালিকানা স্বত্ব আইনের আওতায় নাগরিকদের ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ’ বা  সিএলও দেওয়া হবে, যেখানে ভূমি মালিকানার সব তথ্য থাকবে। ফলে জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য বিভিন্ন কাগজের প্রয়োজন হবে না।

অনলাইনে তথ্য যাচাই

সঠিকভাবে ডিজিটাল ভূমিসেবা দেওয়ার জন্য প্রকৃত ভূমিমালিকের আবেদনের সত্যতা অনলাইনে যাচাই করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রহীন নাগরিকদেরও ডিজিটাল ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাভুক্ত ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’-এর সঙ্গে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিনিময়-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্যও এখন ভূমিসেবা ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রহীন নাগরিকেরাও ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারছেন।

২৪ ঘণ্টা ভূমিসেবা

ভূমি ব্যবস্থাপনায় চালু হয়েছে ‘নাগরিক ভূমিসেবা’। ফলে ১৬১২২ নম্বরে ফোন করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে (https://www.facebook.com/land.gov.bd) বার্তা পাঠিয়ে ভূমিবিষয়ক সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এটি ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’ নামে পরিচিত। ডিজিটাল সেবার কারণে ভূমি কার্যালয়ে না গিয়েই ভূমিসেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। এতে মানুষের অর্থ খরচ ও ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে।

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here