ফোর-জির ভেতর-বাহির

‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে…’ প্রযুক্তির এই যুগে সুকান্ত ভট্টাচার্যের রানারের দেখা প্রায় মেলে না বললেই চলে। সাম্প্রতিক কালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যক্তিগত চিঠি লেখার গুরুত্ব কিছুটা কমেছে। এখন মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রিয়জনকে শুধু দেখাই যায় না, বরং বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজও নিজের ঘরে বসে সেরে ফেলা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৯৩ সালে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, চালু হওয়ার প্রায় তিন বছর পর, অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে ইন্টারনেট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর দেশের প্রথম সাইবার ক্যাফেটি চালু হয় ১৯৯৯ সালে, ঢাকার বনানীতে।

আমাদের দেশে একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহার ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সেই শুরুর দিকের কথা কারও কি মনে আছে? একটি ওয়েবসাইটে ঢুকতে কত সময় লাগত কিংবা ইউটিউবের একটি ছোট ভিডিও চালাতে কী পরিমাণ ধৈর্য নিয়ে বসে থাকতে হতো! লোডিং হচ্ছে তো হচ্ছেই।

আর আজকে ২০১৮ সালে এসে আমরা চোখের পলকেই একটি ওয়েবসাইটে ঢুকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে পারছি। কয়েক শ মেগাবাইটের ফাইল কয়েক মিনিটেই ডাউনলোড হয়ে যাচ্ছে। এ সবই কিন্তু সম্ভব হয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে। জেনে নিই কীভাবে এই পরিবর্তনটা এল।

১৯৮০ সালে প্রথম বেতার টেলিফোন প্রযুক্তিব্যবস্থাকে ১জি বলে ডাকা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে বাণিজ্যিকভাবে টুজি আসার আগে ছিল পুরোটাই এনালগ পদ্ধতির। ১জি (1G) এবং টু-জির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, যে রেডিও সংকেতে ১জি (1G) নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হতো, তা এনালগ আর একই তরঙ্গ সংকেত ডিজিটাল রূপে টু-জি নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা হয়। টু-জি প্রযুক্তিতে কথা বলার পাশাপাশি খুদে বার্তা পাঠানোর সুবিধা ছিল। এর প্রধান সুবিধা হলো ফোনে নিরাপদে কথা বলার মতোই এনক্রিপশন করা। এর প্রায় ১০ বছর পর প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ২০০ কিলোবিট হারে তথ্য আদান-প্রদান করার প্রযুক্তি উন্মুক্ত হয়। এটিই মূলত থ্রি-জি প্রযুক্তি। দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ভিডিও কলসহ মোবাইলে টিভি দেখার সুবিধা এনে দিয়েছিল এই প্রযুক্তি। টু-জির সঙ্গে থ্রি-জির মূল পার্থক্য হচ্ছে এদের বেতার কম্পাঙ্ক এক নয়। ৮০০-৯০০ মেগাহার্জ স্পেকটার্ম ব্যান্ডে টু-জি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো। থ্রি-জির জন্য প্রয়োজন ১৮০০-২৪০০ মেগাহার্জ স্পেকটার্মের ব্যান্ড। মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতার ব্যান্ড কিনে বিভিন্ন দেশে সেবা দিয়ে আসছে।

থ্রি-জি উন্মোচন হওয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানে ২০০৮ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন আইইউটি ফোর-জির ধারণা দেয়। তারা বলে, উচ্চ মোবিলিটি যোগাযোগের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট এবং নিম্ন মোবিলিটি যোগাযোগের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবিট গতি থাকতে হবে। এর চেয়ে কম গতি হলে সেটিকে আইইউটির নীতিমালা অনুযায়ী ফোর-জি বলা যাবে না। বলা যেতে পারে, ফোর-জি হচ্ছে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি-জি) টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির উত্তরসূরি। প্রযুক্তিটি অনেক উচ্চকম্পাঙ্কের ব্যান্ডে চলে। এটা প্রায় ২-৮ গিগাহার্জের সমান। সেকেন্ডে ২ মেগাবাইট থেকে ৪০ মেগাবাইট পর্যন্ত গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে এই প্রযুক্তির সাহায্যে। তাত্ত্বিকভাবে এর ডাউনলোড গতি ১০০ এমবিপিএস থেকে ১ জিবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে। একজন থ্রি-জি ব্যবহারকারী যদি ইন্টারনেটে সেকেন্ডে ১৪ মেগাবাইট গতি পান, তাহলে তিনি ফোর-জিতে ১ জিবিপিএস পর্যন্ত গতি পাবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১ জিবির একটা ফাইল ডাউনলোড করতে থ্রি-জি নেটওয়ার্কে যেখানে ২০ মিনিট লেগেছে, ফোর-জিতে সেটি ৫ মিনিটেই সম্ভব হবে। এ সবকিছুই কিন্তু তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, ইন্টারনেটের গতি আরও বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। ধারণা করা যায়, ফোর-জিতে আরও ভালোভাবে মোবাইল ওয়েব সেবা, আইপি টেলিফোন, গেমিং সেবা, এইচডিটিভি, এইচডি মোবাইল টিভি, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন (থ্রিডি টিভি) এবং ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা পাব। আর সবচেয়ে মজার তথ্য, ২০১৯ সালের মধ্যে চাঁদে ফোর-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। মোবাইল কোম্পানি ভোডাফোন, নকিয়া ও গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি অডি মিলে এই অভিযান পরিচালনা করছে। খুশির খবর হলো, বাংলাদেশও গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ফোর-জি যোগাযোগব্যবস্থায় প্রবেশ করেছে। এখন সবকিছু চলতে থাকুক দ্রুতগতিতে।

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here