মেটাভার্স চালু নিয়ে প্রযুক্তি বাজারে হঠাৎই শোরগোল শুরু হয়েছিল। এর ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর অনুরূপ গুগলের বার্ড নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হয়। এত কিছুর মাঝে মেটাভার্সের কথা অনেকটা হারিয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে মেটাভার্স কি তাহলে হারিয়ে গেল? তবে ভবিষ্যতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে মেটাভার্সের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেকে এখন আশাবাদী। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি নিয়ে আশাবাদীরা কি মেটাভার্সকে রক্ষা করতে পারবে এমন প্রশ্নই এখন প্রকাশ্যে।
বিবিসিতে প্রকাশিত খবরের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে মেটাভার্স প্রযুক্তি জগতে বড় ধরনের সাড়া ফেলে। বিশেষ করে ফেসবুক এ প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার জন্য বড় বিনিয়োগ করে। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) জগতে এটি বড় প্রভাব বিস্তার করলেও বর্তমানে এটি কোনো স্বপ্ন দেখাতে পারছে না। বর্তমান সময়ে হট টপিক চ্যাটবটের জনপ্রিয়তার কারণে অনেকে ভাবছেন মেটাভার্সের সময় বোধহয় শেষ। তবে সবাই এর সঙ্গে একমত নয়। অনেক প্রভাব বিস্তারকারী এখনো ভার্চুয়াল এ জগতের পরিধি বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মেটাভার্সের সংজ্ঞা নিয়ে এখনো বিরোধ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে এটি একটি ভার্চুয়াল দুনিয়া, যেখানে ব্যবহারকারী বা অংশগ্রহণকারীরা নিজস্ব অ্যাভাটারের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবে। কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি এসব অ্যাভাটারের মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি সামাজিকীকরণে যুক্ত হওয়া যাবে এমনকি গেমও খেলা যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস একটা সময় মেটাভার্স অফিসে যাওয়ার যে চর্চা সেখানে পরিবর্তন আনবে এবং অনলাইনে সামাজিকীকরণের অন্যতম প্লাটফর্মে পরিণত হবে।
১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে গেমিং কনটেন্ট তৈরি করছেন টাইগ্রেসএক্স। তিনি বলেন, ‘মেটাভার্সে তার অন্যতম পছন্দের একটি কাজ হচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে মুভি দেখা। এখানে মনে হয় আমরা একত্রে বসে মুভি দেখছি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক বন্ধুর বিয়েতে আমি ভিআরের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছি। বলতে গেলে এ অভিজ্ঞতা খুবই আনন্দের।’
ইনফ্লুয়েন্সার টেকম্যান জু ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করেন, ভার্চুয়াল গেমস খেলেন এবং ইউটিউব ও টিকটকে ধারাভাষ্য শেয়ার করে থাকেন। মেটাভার্সের মাধ্যমে তিনি এমন সব জায়গায় যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যেখানে বাস্তব জীবনে যাওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি ও ডাইমেনশন রয়েছে।
বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে টেকম্যান জু, টাইগ্রেসএক্স ও থ্রিলের মতো প্রভাববিস্তারকারীরা মেটাভার্সের পরিধি বাড়াতে বড় ধরনের অবদান রাখবে। পিডব্লিউসির মেটাভার্স টেকনোলজিস বিভাগের প্রধানও ভিআর ফিল্ম পরিচালক অ্যালেক্স রুহুল বলেন, ‘ভিডিও পোস্ট ও লাইভস্ট্রিমিং ছাড়াও এর পরিধি আরো বিস্তৃত। প্রতিষ্ঠিত ইনফ্লুয়েন্সাররা বর্তমানে অনুসরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মেটাভার্সকে নতুন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে।’
প্রযুক্তি সাংবাদিক জে মেটাভার্সের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তার মতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির বিস্তৃতি ও ব্যবহার বাড়াতে এবং কোম্পানিগুলোকে এটি ব্যবহারে গ্রাহককে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
ভিডিও গেমের মাধ্যমে মেটাভার্সে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অধিকাংশ ভিআর টাইটেলই মূলত গেম। অন্যদিকে প্লেস্টেশন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান সনি সম্প্রতি নতুন হেডসেট বাজারে এনেছে। জে’র মতে মেটাভার্সের স্বাভাবিক অংশগ্রহণকারীদের বড় একটি অংশ হচ্ছে গেমার। এ কারণে তারা যুগের পর যুগ ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিচরণ করছে।