বাংলাদেশ যেভাবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হলো

ড. সম্পদ পাণ্ডের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ২০১৬ সালে। আমি তখন সাইপ্রাসের ফ্রেডেরিখ ইউনিভার্সিটিতে ড. হ্যারিস হরলম্বুসের তত্ত্বাবধানে ইরাস্মুস মুন্ডুস বৃত্তি নিয়ে নভোবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি করছি। এরই মাঝে ভারত থেকে ড. সম্পদ পাণ্ডে ও ড. শরত ত্রিপাঠি এলেন তিনমাসের জন্য ভিন্ন দুটো রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ করতে। তাদের জন্য ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি একটি নতুন কক্ষে গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বসে ড. সম্পদ আয়নোস্ফিয়ারের তলদেশ নিয়ে গবেষণা করেন আর ড. শরত ত্রিপাঠি কাজ করেন সূর্যের অগ্নিফুল্কি বা সোলার ফ্লেয়ার নিয়ে। বরাদ্দপ্রাপ্ত স্কলারশিপ নিয়ে ইতোমধ্যে ভারত থেকে আরও দুজন এসেছেন। একজন কেরালার ড. টিজু জোসেফ; অন্যজন কোলকাতার বাঙালী বাবু, ড. তন্ময় দাস। ভুটান থেকে এসেছেন পুরকৌশলের শিক্ষক লেকি দর্জি, তার প্রজেক্ট গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের (জিএনএসএস) ওপর মহাশূন্যের নিয়ত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া বা স্পেস ওয়েদারের প্রতিক্রিয়া অনুসন্ধান করা। সবাই মিলে মজা বেশ জমে উঠেছে। একেক দিন একেকজনের ফ্ল্যাটে রান্নার আয়োজন আর একসাথে বসে উদরপূর্তি। সপ্তাহান্তে আমরা সবাই দলবেঁধে সাইপ্রাসের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে মনের সুখে ঘুরে বেড়াই। সুখের দিনগুলি একসময় ফুরিয়ে আসে, বিদায়ের ঘণ্টা বাজে। ফের দেখা হবে, এই বলে আমরা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিই।

বছর তিনেক পরের কথা। ২ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, এই এগারো দিন ইন্টারন্যাশনাল রেফারেন্স আয়নোস্ফিয়ারের ওপর দু-সপ্তাহের একটা ওয়ার্কশপ হবে সাইপ্রাসে (http://iri2019.frederick.ac.cy)। আয়োজক কমিটি, ফর স্পেস রিসার্চ (https://cosparhq.cnes.fr/), নিমন্ত্রণ ফ্রেডেরিখ ইউনিভার্সিটির। সাধারণ যুগ্ম-সভাপতি দুজন: একজন স্বনামধন্য নাসা গবেষক ড. দিটার বিলিটজা, অন্যজন আমার পিএইচডি সুপারভাইজার ড. হ্যারিস হরলম্বুস। ড. হ্যারিসের কল্যাণে বিষয়টি জানতাম বেশ আগে থেকেই। “অল্প কজন শিক্ষার্থী নেওয়া হবে, সুতরাং এপ্লিকেশনটি করো বেশ গুছিয়ে। একই সঙ্গে আমি তোমার থিসিস ডিফেন্সের জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষার আয়োজন করব, সুতরাং ট্রাভেল গ্রান্ট চাওয়ার দরকার নেই।” হ্যারিস আমাকে আগেভাগেই সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন। গুরুবাক্য শিরোধার্য। ৪ আগস্ট ২০১৯ সালে ড. দিটার বিলিটজার আমন্ত্রণ বার্তা পেলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ১০০ জনেরও বেশি আবেদনকারী হতে মোট ৩৬ জনকে বাছাই করে তিনি চিঠি দিয়েছেন। সেই তালিকায় ড. সম্পদ পাণ্ডেও আছেন।

অবশেষে ফের দেখা হলো। দিনটি ছিল ২০১৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর। আমি ও ড. সম্পদ পাণ্ডে সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোশিয়ার সলোমন স্কয়ারের খোলা হাওয়ায় বসে গল্পে মেতে উঠেছি। সাথে আছেন নাইজেরিয়া থেকে আসা ড. মোজেস। এবারে সাইপ্রাস আসবার সময় লারনাকা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পেরুনোর পর ড. মোজেসের সঙ্গে প্রথম দেখা ও পরিচয়। আমিও একই ওয়ার্কশপে যোগ দিতে যাচ্ছি শুনে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। গল্পের এক ফাঁকে ড. সম্পদ পাণ্ডে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আমাদের নাতিদীর্ঘ ধারণা দিলেন। “আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি এই প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি পেয়েছি। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের প্রফেসর রবার্ট হোলজওয়ার্থ এই প্রজেক্টের ডিরেক্টর। তাঁর সঙ্গে আমার গবেষণা চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আপনারাও আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে এই প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তাহলে আমাদের মধ্যে একটা সমন্বিত গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি হবে।”

২০০৯ সাল থেকে বিগত এক দশক জুড়ে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্নভাবে বিশ্বজুড়ে বজ্রপাত চিহ্নিত করার পাশাপাশি বজ্রপাতের স্থান, সময় ও প্রাবল্য নির্ণয় করে আসছে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের আর্থ ও স্পেস সায়েন্স বিভাগ নিজস্ব গবেষণাগারে প্রস্তুতকৃত যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি করা সেন্সর স্টেশন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করে এই নেটওয়ার্কটি পরিচালনা করে। কোনো জায়গায় বজ্রপাত ঘটলে সেখান থেকে একধরনের অতি নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ নিঃসৃত হয়। এই তরঙ্গের নাম স্ফেরিক্স। অতি ক্ষুদ্র হলেও এই তরঙ্গের আছে এক অদ্ভুত ক্ষমতা। আমরা যদি ভূপৃষ্ঠের উপরিদেশ ও আয়নোস্ফিয়ারের তলদেশের মাঝামাঝি স্থানটিকে একটা বিশাল টানেল হিসেবে কল্পনা করি, তবে সেই টানেলের মধ্যদিয়ে এই স্ফেরিক্স নিমেষেই ছুটে যেতে পারে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে একেবারে অন্য প্রান্তে। সুতরাং পৃথিবীর যেকোনো স্থানে সেন্সর স্টেশন বসিয়ে স্ফেরিক্সকে চিহ্নিত করা সম্ভব। কাজটা কিন্তু একটিমাত্র সেন্সর স্টেশন দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ন্যুনতম পাঁচটি স্টেশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই মুহূর্তে যে বজ্রপাতটি হলো, তার মাত্রা কিন্তু বিধি অনুসারে আমাদের কারোরই জানা নেই। তবে সেই স্থান থেকে দু-দুটি ভিন্ন দূরত্বে স্থাপিত সেন্সর স্টেশনে রেকর্ডকৃত তরঙ্গের মধ্যে একটা আনুপাতিক হার নির্ধারণ করা সম্ভব। এভাবে দুইয়ের অধিক সেন্সর স্টেশনের আনুপাতিক হারগুলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, স্টেশনগুলোর দূরত্বের সঙ্গে এর একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্কটিই বজ্রপাতের স্থান নির্ণয়ের মূল চাবিকাঠি। বজ্রপাতের নিকটবর্তী একটি সেন্সর স্টেশনে স্ফেরিক্স পৌঁছাবে আগে; আর দূরবর্তী স্টেশনে পৌঁছাবে অতি সামান্য হলেও পরে। এখন যদি পাঁচটি ষ্টেশন নিয়ে আমরা এই টাইম অব গ্রুপ এরাইভ্যাল (টিওজিএ) পর্যবেক্ষণ করি, তবে বজ্রপাত হবার সময়টি নির্ধারণ করা সম্ভব। সবচেয়ে দামী কথা হলো, ঘটে যাওয়া বজ্রপাতের স্থান, সময় ও প্রাবল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হলে সেগুলোকে সূক্ষ্ম প্রেডিকশন মডেলে ফেলে ভবিষ্যৎ বজ্রপাতের একটা বৈশ্বিক চিত্রাঙ্কন করা যায়, যা কিনা আমাদের কাজে লাগে।

প্রফেসর রবার্ট হোলজওয়ার্থকে প্রথম ইমেইলটা পাঠালাম ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর। লিখলাম, “আমি একজন অতিক্ষুদ্র গবেষক; বর্তমানে বাংলাদেশের আয়নোস্ফিয়ারের চরিত্র উদ্ঘাটনের কাজে নিবেদিত আছি। বাংলাদেশকে আমি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি সেন্সর স্টেশন হোষ্ট করতে ইচ্ছুক। আমাদের দেশে বজ্রপাত একটি বিষম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিয়ে আমাদের দেশে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে গবেষণাকেও যথেষ্ট উৎসাহিত করছে। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই নেটওয়ার্কের কোনো স্টেশন নেই। এখানে যদি একটি স্টেশন স্থাপন করা হয়, তবে বিশ্ব যেমন বাংলাদেশের আশেপাশের বজ্রপাত ঘটিত ডিসচার্জের ডাটা পাবে, তেমনি আমরাও গবেষণার জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭০টি স্টেশনের ডাটায় প্রবেশাধিকার লাভ করব।“

উত্তর এলো পরদিনই। প্রফেসর হোলজওয়ার্থ লিখলেন, “ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্ক নিয়ে তোমার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। ঢাকা থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরায় আমাদের একটি স্টেশন বহু বছর ধরে চলে আসছে। সাধারণত আমরা ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে আরেকটি স্টেশনের জন্য অর্থলগ্নি করি না। কিন্তু তোমরা যদি নিজেরা হার্ডওয়্যার তৈরি করে একটি স্টেশন হোষ্ট করতে চাও, তাহলে আমরা তোমাকে সার্কিট ডায়াগ্রাম পাঠিয়ে দিতে পারি।” চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমাদের ল্যাবে সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখে দেখে এসব সূক্ষ্ম মাপের যন্ত্রপাতি তৈরি করা রীতিমতো একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তাছাড়া প্যান্ডেমিকের তোড়ে পৃথিবীর তখন ত্রাহি ত্রাহি দশা। এ মুহূর্তে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ফোকাস ভিন্ন।

নিজেকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পুতুল নাচের ইতিকথা” উপন্যাসের একেবারে প্রথম পাতায় বর্ণিত হারি ঘোষের মতো লাগছিল তখন। “খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন।”

দুই

আশা ছাড়ি না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, আরো কিছু তথ্য ও যুক্তি দিয়ে আরো বিনয়ের সঙ্গে বিষয়টি আবার উপস্থাপন করব। বাংলাদেশে বজ্রপাতের পৌনঃপুনিকতা ও প্রখরতার ওপর গত দশ বছরের উপাত্ত সংগ্রহ করি। পাঁচ দিন পর আবারও ইমেইল করি প্রফেসরকে। যুক্তি সাজিয়ে লিখি, “আমি তোমাদের অর্থলগ্নি করার পলিসির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তথাপি মধুপুর, যা কিনা ঢাকার কাছাকাছি অবস্থিত; এলাকাটি পুরো দক্ষিণ-পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম বজ্রপাত প্রবণ এলাকা। সুতরাং এই এলাকাটির কাছাকাছি একটি সেন্সর স্টেশন স্থাপন করলে সারা বিশ্বে বজ্রপাত নিয়ে যারা গবেষণা করছেন, তাঁরা একটি নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পাবেন বলে আমি মনে করি। এর ফলে আগামীতে আরো কার্যকরী ও শক্তিশালী বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা ডিজাইন করা সম্ভব হবে। আমি তোমার নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ রাখছি, বিষয়টি আরেকবার ভেবে দেখ এবং আমার অনুরোধটি পুনর্বিবেচনা কর।” দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করতে থাকি প্রত্যুত্তরের।

অবশেষে উত্তর আসে আটদিন পরে। ২০ আগস্ট ২০২০, ভোর চারটা চার মিনিটে। “প্রিয় মো. গোলাম মোস্তফা, তোমার অনুরোধ নিয়ে আমি সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং আমরা একমত হয়েছি যে তোমার ওখানে একটি স্টেশন স্থাপন করলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্ক উপকৃত হবে; যদিও তোমার প্রস্তাবিত এলাকা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে আমাদের নেটওয়ার্কের আরেকটি স্টেশন (ত্রিপুরা) আছে। সুতরাং এসো, এই কাজে সংযুক্ত হবার জন্য আমরা তোমাদের সঙ্গে যে চুক্তিতে আবদ্ধ হব, মোটা দাগে তার শর্তগুলো জেনে নিই। এটি শুধুমাত্র তোমার আর আমার মধ্যে বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণার চুক্তিই নয়; তোমার ও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও একটি পারস্পরিক বোঝাপড়ার চুক্তি, যার আওতায় তুমি-আমি মিলে একটি সম্মিলিত গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেবার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব। আমরা যেকোনো সময় এই চুক্তি থেকে মুক্ত হতে পারি এবং এজন্য তোমার কিংবা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কোনো দায়ভার বর্তাবে না।”

এরপর বেশ কয়েক পাতার একটি বিস্তারিত চুক্তি এঁটে দেওয়া। যথা দ্রুত সম্ভব আমি বিষয়টি আমার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনি। চুক্তির সুবিধা-অসুবিধা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাঁদের আনুষ্ঠানিক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আমাকে জানিয়ে দেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। আর দেরী না করে আমি প্রফেসর হোলজওয়ার্থেকে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ইমেইল করি। ততদিনে অতিমারীর প্রকোপ আরো তীব্র হয়েছে।

দিন যায়, মাস যায়, বছরও প্রায় যায় যায়! উত্তর আসে না। নতুন বছর আসে, তবুও না। নতুন বছরের চারদিন অতিক্রান্ত হলে প্রফেসর হোলজওয়ার্থকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবার ছলে বিষয়টি মনে করিয়ে দেবার কথা মাথায় আসে। লিখি, “শ্রদ্ধেয় প্রফেসর, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের শুভ নববর্ষ। এই মৃদু স্মরণিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, যদি আমার পূর্বের ইমেইলটি তোমার দৃষ্টিগোচর না হয়ে থাকে। আবারও জানাচ্ছি যে, আমরা সানন্দে তোমার পাঠানো চুক্তির শর্তাবলীতে সম্মতি জ্ঞাপন করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদাধিকারী ইতোমধ্যেই এই প্রজেক্ট এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করেছেন। আমি আবারও তোমার প্রতিশ্রুত যন্ত্রপাতিগুলো পাঠানোর জন্য আমাদের ঠিকানা প্রদান করছি। শিগগিরই তোমার ইতিবাচক সাড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।” পাঁচ ঘণ্টা যেতে না যেতেই উত্তর আসে, “প্রিয় মোস্তফা, আমি তোমার ইমেইল পেয়েছি। আমি দুঃখিত, কোভিড সবকিছু স্তিমিত করে দিয়েছে। আশাকরি জানুয়ারির শেষ নাগাদ আমি তোমাকে প্রতিশ্রুত যন্ত্রপাতিগুলো পাঠাতে পারব। সিনসিয়ারলি, বব।”

জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি চলে যায়, মার্চ আসে। যন্ত্রপাতির শিপমেন্ট হয় না। ইতোমধ্যে ফর্মাল প্রফেসর রবার্ট হোলজওয়ার্থ আমার কাছে ইনফরমাল ববে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আমি তাঁকে বব নামে সম্বোধন করেই স্মরণিকা প্রেরণ করার সুযোগ নিই। স্মরণিকার উত্তর আসে চটজলদি, “প্রিয় মোস্তফা, হ্যাঁ আমরা কিছুটা দেরী করে ফেলেছি, এ মাসের শেষ নাগাদ আমি তোমাকে যন্ত্রপাতিগুলো পাঠাচ্ছি। বিলম্বের কারণগুলো আমি তোমাকে লিখে জানাতে পারি। কিন্তু সেগুলো বিরক্তিকর। কিছু এমপ্লয়িদের মেডিক্যাল ইস্যু আর কোভিড ইস্যু তো আছেই।”

মার্চ চলে যায়, চলে যায় টি এস এলিয়টের ক্রুয়েলেষ্ট মাসও, মে মাসে যখন ওদের ওখানে ফুলের সমারোহ, তখন পুনরায় লিখি, “প্রিয় বব, তুমি আমার আগের ইমেইলের সূত্রগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নাও। তোমাকে একটি মৃদু স্মরণিকা দিলাম।” এবারের উত্তরও তাৎক্ষণিক। “প্রিয় মোস্তফা, আমাদের এখানে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। তোমার অনুরোধ রাখার জন্য আমাকে আরো কিছুদিন সময় দিতে হবে। আমাদের বর্তমান নেটওয়ার্কের বেশ কিছু স্টেশন চালু রাখার জন্য যন্ত্রপাতি রিপ্লেসমেন্ট করতে হচ্ছে। সুতরাং নতুন ব্যাচের যন্ত্রপাতি তৈরি হয়ে আসা অব্দি আগামী আগস্ট মাসের আগ পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করে যেতে হবে। পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্য তুমি আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যেতে পার। তোমাকে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় রাখবার জন্য আমি দুঃখিত।”

মন মুমূর্ষু হয়, তবু আশা কভু মরে না। আগস্ট মাস আমার জীবনে নিদারুণ বেদনার নদী বইয়ে দেয়। পিতৃবিয়োগের গাঢ় বেদনার নিদারুণ ভার আমার বুকের গভীরে শীতল আগুনের চিরস্থায়ী তীব্র জ্বালাময়ী ক্ষত তৈরি করে দেয়। কিন্তু তবুও মৃত্যুর উপত্যকা পেরিয়ে জীবনের গতি প্রবাহ এগিয়ে যায়। সেপ্টেম্বর আসে, মাসের শুরুতে আমি আবারও ববকে লিখবার জন্য কালো কিবোর্ডের ওপর আঙুল রাখি। এবারও তাৎক্ষনিক উত্তর, “প্রিয় মোস্তফা, আমি ক্রমাগত বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার তালিকায় পরবর্তী জনই তুমি। আশাকরি আগামী সপ্তাহেই। ফেডএক্সের জন্য তোমার ঠিকানাটা আবার জানাও। সেই সঙ্গে তোমার স্থানীয় ফোন নম্বর আর কাস্টমস খালাসের জন্য যা যা কাগজপত্র লাগবে। প্যাকেজের সঙ্গে আমরা তোমাকে সরঞ্জামাদির একটি পূর্ণ তালিকা পাঠাব, আইটেমাইজড। এই প্যাকেজের কোনো বাণিজ্যিক মূল্য নেই। আমরা এসব সরঞ্জামাদি তোমার ইন্সটিটিউটকে আমাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হবার জন্য দান করছি।” সঙ্গে সঙ্গেই ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠিয়ে দিই। পরদিনই ফেডএক্স থেকে ট্র্যাকিং নোট আসে। আমার প্যাকেজ পিক আপ করেছে তারা।

তিন

প্যাকেজ ঢাকা কাস্টমস-এ চলে এলো। এখন খালাস করার পালা। কখনো কখনো একেবারেই অচিন্তনীয় ও অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকেও সাহায্যের হাত প্রসারিত হয়। এগিয়ে আসেন ঢাকা কাস্টমসের এডিশনাল কমিশনার মি. মাহবুব। তিনি প্রফেশনাল দায়িত্বে অটল থেকেই মাল খালাসের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেন। অনুজ ও স্নেহভাজন মাহবুব ও আমি উভয়েই বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। “মোস্তফা ভাই, খালাস হয়ে আপনার প্যাকেজ এখন আমার অফিসে। আজই চা পানের নেমন্তন্ন নিন।” চটজলদি বিভাগীয় প্রধানকে জানালাম। তিনি সঙ্গে পাইক-পেয়াদা দিয়ে দিলেন। প্রশাসনিক পরিচালক জানামাত্র গাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। এবারে ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল’। কাস্টমস থেকে প্যাকেজ বুঝে পেয়ে, খোশমেজাজে সরাসরি ল্যাবে ফিরে এলাম। পথিমধ্যে এন্টেনা ফিট করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও আর্থিং-এর জন্য তামার তার কিনে নিলাম। কিনলাম মানসম্মত মাল্টিপ্লাগ ও সকেট। একটা অনলাইন ইউপিএস আগেই কিনে রেখেছিলাম, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যে। লোড শেডিং কিংবা অকস্মাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময়টুকুতে আমি ডাটা হারিয়ে যেতে দিতে চাই না। সবকিছু গুছিয়ে রেখে সন্তুষ্টচিত্তে যখন বাড়ি ফিরছিলাম, তখন আকাশপানে চোখ রাখলাম। কখন যে সূর্য গোধূলির আকাশে গোলাপি বরণ আভা ছড়াতে লেগেছে, বুঝতেই পারিনি।

পরদিন থেকে শুরু হলো সরঞ্জামাগুলো সেটআপ করার কাজ। লাইটনিং থেকে নির্গত অতি ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের (৩ থেকে ৩০ কিলোহার্টজ) তরঙ্গের নাম স্ফেরিকস বা রেডিও এট্মোস্ফিয়ারিকস। হুইসেলের মতো শব্দ করে ওঠে বলে অনেকে একে হুইসেলারও বলেন। বব এই তরঙ্গ ধরার জন্য পাঠিয়েছে একটি ভেরি লো ফ্রিকোয়েন্সি (ভিএলএফ) এন্টেনা আর একটি ভিএলএফ রিসিভার। এন্টেনায় শব্দতরঙ্গ ধরা পড়বে আর রিসিভার তাকে আমন্ত্রণ করে ঘরে নিয়ে আসবে। কিন্তু অতি দুর্বল এই তরঙ্গকে শনাক্ত করা রিসিভারের জন্য খুবই দুরূহ ব্যাপার। তাই একে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় শক্তিশালী করে নেবার জন্য এন্টেনা ও রিসিভারের মাঝামাঝি স্থাপন করতে হয় একটি প্রি-এমপ্লিফায়ার। বব সেটিও পাঠিয়েছে। স্ফেরিক্সের তরঙ্গদৈর্ঘ্য শব্দতরঙ্গের সীমানার মধ্যেই। তাই সচরাচর ব্যবহৃত একটি সাউন্ড কার্ডই একে ক্যাপচার করে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে সক্ষম। বব পাঠিয়েছে তেমনি একটি সাউন্ড কার্ড সম্বলিত একটি রাসবেরি পাই কম্পিউটার। একটি মাইক্রো এসডি কার্ডও আছে তাতে; কম্পিউটারের স্মৃতি। মোটা দাগে এই হলো সিস্টেম। নেটওয়ার্কে ডাটা পাঠাতে আমার প্রয়োজন একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। রাসবেরী পাই-এ ইনপুট দেওয়ার জন্য একটি কিবোর্ড আর একটি ইঁদুর; আউটপুট দেখার জন্য একটি মনিটর। আইসিটি পরিচালকের কাছে অনুরোধ রাখতেই মুহূর্তেই অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে সবকিছুর ব্যবস্থা হলো। একেবারে বিদ্যুৎগতিতে; ‘দ্রুত ও নিশ্চিত’। একটির সঙ্গে আরেকটির সংযোগ দিয়ে আমি সিস্টেম দাঁড় করিয়ে ফেললাম। এবার যথোপযুক্ত জায়গায় এন্টেনা স্থাপনের পালা। যাতে করে স্ফেরিক্স বাবাজি ঘুলঘুলিতে বসা চড়ুইয়ের মতো নিরাপদে এন্টেনায় নেমে আসে। বব আগেই পদ্ধতি বাতলে দিয়েছিল। সাউন্ড পোর্টে ভাল একটা হেডফোন লাগাবে। ডান কান বন্ধ রেখে বাম কানে শুনতে শুনতে ছাদে এন্টেনা নিয়ে হাঁটতে থাকবে। যেখানে হুইসেলের শব্দ সবচেয়ে স্পষ্ট শুনবে, সেটাই মোক্ষম স্থান। ছাদে এলাম। নির্দেশনা অনুযায়ী পায়চারী করছি। আড়ালে দাঁড়িয়ে অনেকেই দূর থেকে আমার কাণ্ড-কারখানা দেখছে। পাগল বিজ্ঞানীর কাণ্ড দেখে তাঁদের ঠোঁটের কোণায় কী ধরণের হাসি ফুটে উঠছে, পাঠক তা নিজ দায়িত্বেই অনুমান করে নিন। অবশেষে, স্পষ্টতর হুইসেল বাজল; একেবারে মিলিটারি ট্রেনিংয়ে ড্রিল প্রশিক্ষকের ক্ষমাহীন বাঁশির শব্দ কানে ভেসে এলো।

আমি ধীরে-সুস্থে রাসবেরি পাই কম্পিউটারের বোতাম টিপে দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই মনিটরের পর্দায় তিনটি টসটসে রাসবেরি পাইয়ের ছবি ভেসে উঠল। তারপর লগইন ডায়ালগ বক্স। লগইন করার তিনটি অপশন সেট করে দেওয়া আছে। অনুমান করতে সমস্যা হলো না, আমাকে লগইন করতে হবে হোষ্ট হিসেবে। সেটাই সিলেক্ট করলাম। কম্পিউটার এবারে পাসওয়ার্ড চাইল। মুশকিল, এখন পাসওয়ার্ড পাই কোথায়? ববের কাছে ইমেইল করে জানতে চাইব? ওর সঙ্গে আমার সময়ের ব্যবধান ১২ ঘণ্টা। বেচারা সারাদিন খেটে খুটে নিশ্চয়ই এখন ঘুমোচ্ছে।

চার

রাত ১২টায় ঘুমুতে যাবার আগে ববকে ইমেইল করি। লিখি, “তুমি আমাকে টিসিপি/ইউডিপি পোর্টের একটি লিষ্ট পাঠাতে চেয়েছিলে, আর পাঠাতে চেয়েছিলে কয়েকটি আইপি এড্রেস; যাতে বাংলাদেশে স্থাপিত নতুন স্টেশনটি তোমাদের নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারে। তাছাড়া, তুমি কি আমাকে হোষ্ট হিসেবে লগইন করার জন্য কোনো পাসওয়ার্ড পাঠিয়েছ?” রাত তিনটায় টুং করে সেলফোন বেজে ওঠে। দেখি, ববের মেসেজ এসেছে। ছয়টি আইপি এড্রেস আর ডাটা টানেলিং করার জন্য তিনটি টিসিপি/ইউডিপি পোর্ট। আলাদা আরেকটি মেসেজে পাসওয়ার্ড পাঠিয়েছে; সেই সঙ্গে লাল অক্ষরে লিখে দিয়েছে, পাসওয়ার্ড সুরক্ষার জন্য দয়া করে এই ইমেইলের উত্তর করো না কিংবা একে ফরওয়ার্ড করো না। পরদিন ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেই সরাসরি ল্যাবে চলে যাই। রাসবেরি পাই-এর বোতাম টিপে লগইন করি। পাসওয়ার্ড আগেই মুখস্থ করে রেখেছিলাম; অসীম উত্তেজনা নিয়ে আলাদিন গুহার দরজার কাছে এসে যে অভিব্যক্তিতে ‘সিসিম ফাঁক’ বলেছিল, আমার চোখেমুখে তার খানিকটা ফুটে ওঠে। দরজা খুলে যায়। ববের কথা মতো গুগলে ঢুকি, সিএনএন-এ ঢুকি। বোঝা গেল, আমার কম্পিউটার বাইরের জগতের সঙ্গে কথা বলছে। এমন হলে ববের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী আমার কম্পিউটার ওর সিস্টেমের সঙ্গে অটোমেটিক রিভার্স টানেল স্থাপন করার কথা। ববকে ইমেইল করি, “দেখো তো, আমাদের পাচ্ছ কি না?” উত্তর আসে, ২৩ সেপ্টেম্বর রাত আটটা ২৫ মিনিটে, “না, মোস্তফা, আমি তোমার স্টেশনকে আমাদের ফ্লাশ২ টানেল ডাটাতে দেখছি না। তোমাকে আরেকটি পোর্ট পাঠালাম। এই পোর্টে যোগাযোগের চেষ্টা করো। ২৫ ও ২৬ তারিখ ছুটির দিন, ল্যাব বন্ধ। পরদিন অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর আবার সেই পোর্টে যোগাযোগের চেষ্টা। প্রত্যেকবারই বিফল হলাম। এভাবে করে করেই ২৭ সেপ্টেম্বর ফুরোলো। ভাঙ্গা মন নিয়ে ববকে ইমেইলে লিখলাম, “বব, আমি গুগল, সিএনএন পাচ্ছি; কিন্তু তোমার সিস্টেমের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না। দেখ দেখি, তোমার প্রান্তে কোনো সমস্যা কি না?”

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১। ববের ইমেইল আসে, ভোর পাঁচটা ষোল মিনিটে। “প্রিয় মোস্তফা, সাফল্য! আমরা তোমার কম্পিউটারটিকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি। এখন প্রয়োজন ভিএলএফ এন্টেনাসহ রিসিভারটিকে তোমার কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করা, যাতে তোমার ওখান থেকে স্ফেরিক্স শব্দ তরঙ্গগুলো আমাদের প্রান্ত পর্যন্ত স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারে। এই মুহূর্তে তোমার ওখান থেকে আমরা কোনো স্ফেরিক্স পাচ্ছি না। সচারচর এটা হয় প্রিএমপ্লিফায়ার যদি রিসিভারের সঙ্গে ঠিকমত সংযুক্ত না থাকে। আমরা ভালো মানের স্ফেরিক্স শব্দতরঙ্গের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ পেতে শুরু করলেই সেগুলোকে নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত আমাদের ব্যাকআপ সার্ভারে সংরক্ষণের জন্য প্রোগ্রাম সেটআপ করব। এক/দুই সপ্তাহ সেগুলোর যথার্থতা নিশ্চিত করে তারপর সেগুলোকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্কের ডাটা ষ্ট্রিমের সঙ্গে পুরোপুরি সন্নিবেশিত করব। শুরু হিসেবে আসলে দারুণ! এই দেখ, তোমার স্টেশনের এ মুহূর্তের স্পেকটোগ্রাম। এখনও কোনো ভিএলএফ ডাটা দেখাচ্ছে না।” ববের ইমেইল থ্রেডে জেমস ব্রুন্ডেল নামে আরেকজনের ইমেইল দেখি। সেখানে লেখা, “হাই বব! এখন তো কাজ করছে মনে হচ্ছে, নাকি? পোর্ট ২৮০৩৫-এ একটা স্টেশন অনলাইনে আছে, দেখতে পাচ্ছি। জিপিএসে স্থান দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতি, জেমস।” মানে, পুরোপুরি সাফল্য এলো না।

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here