এমআইটির চোখে ২০২৩-এর যুগান্তকারী কয়েকটি প্রযুক্তি
নিঃসন্দেহে গত বছরে বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি প্রকাশ। প্রায় দুই যুগ কাজ করার পর গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মহাকাশে পাঠানো হয় জেমস ওয়েব নভোদুরবিন। ৩০ দিনের মহাকাশযাত্রা শেষে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে গিয়ে পৌঁছে এটি। এর প্রায় ছয় মাস পর, ২০২২ সালের ১২ জুলাই নাসা প্রথমবারের মতো এই নভোদুরবিনের তোলা কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে। হতবাক হয়ে যায় পুরো পৃথিবী। অবলাল আলোক তরঙ্গ শনাক্ত করে ছবি তুলতে সক্ষম নভোদুরবিনটির তোলা সেই ছবিগুলোর মাঝে ছিল প্রায় সাড়ে ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের গভীর মহাকাশ, তারার জন্মমৃত্যু, গ্যালাক্সির বিবর্তন, সৌরজগতের বাইরের গ্রহে পানির উপস্থিতিসহ আরও অনেককিছু। এসব ছবি যে শুধু দেখতে শ্বাসরুদ্ধকর, তা নয়; সেগুলো বিশ্লেষণ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জেনেছেন মহাকাশের সুদূরতম অতীতের নানা তথ্য। আগে মানুষ যতটা অতীতের মহাকাশ দেখতে পেয়েছিল, এই নভোদুরবিনের সাহায্যে পেরিয়ে গেছে সেই সীমা। সবমিলিয়ে বলা যায়, মানুষের মহাকাশচর্চার নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে। চলতি বছরেও জেমস ওয়েবের নানা চমক অব্যাহত থাকবে।
উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ‘ক্রিসপার’ প্রযুক্তি
হার্ট অ্যাটাকের ফলে শরীরে যে ক্ষতি হয়, তা নিরাময়ের পরিবর্তে প্রতিরোধ করা যায় কি না, এ নিয়ে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি ভার্ভ থেরাপিউস্টিক। ২০২২ সালে তাঁরা মানবদেহে তাঁদের উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে।
রক্তের এলডিএল (ক্ষতিকর) কোলেস্টেরল-কে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই কোলেস্টরেল একটি বিশেষ জিনের কারণে তৈরি হয়। এ চিকিৎসায় ‘ক্রিসপার’ (CRISPR) প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই জিনকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়। বানরের ওপর এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এই চিকিৎসায় মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে কোলেস্টরেলের মাত্রা ৭০ শতাংশে নেমে আসে। এমনকি এ অবস্থা স্থিতিশীল থাকে প্রায় এক বছর। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে ও নিউজিল্যান্ডে পরীক্ষামূলকভাবে এই চিকিৎসা মানবদেহে প্রয়োগ করে। জেনেটিক ত্রুটির কারণে যাদের রক্তে প্রচুর কোলেস্টরেল তৈরি হয়, প্রাথমিকভাবে তাঁদেরকে বেছে নেওয়া হয় এই মানব ট্রায়ালের জন্য।
গত বছর নভেম্বরে অন্তত তিনজনকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। নতুন বছরের মাঝামাঝি নাগাদ এসব ট্রায়াল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে ভার্ভ থেরাপিউস্টিকের কর্মকর্তারা। ফলাফল ইতিবাচক হলে চিকিৎসাক্ষেত্রে আসবে অভাবনীয় পরিবর্তন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি চিত্রশিল্প
যেকোনো বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নের গোছানো উত্তর কিংবা চিত্রশিল্প তৈরির কাজ করে গত কয়েক বছরে মানুষকে অবাক করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ওপেনএআই নামক প্রযুক্তি কোম্পানির তৈরি দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—চ্যাটজিপিট ও দাল-ই গত বছর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। একটি লিখিতভাবে প্রশ্নের গোছানো উত্তর দেয়, অন্যটি কমাণ্ড নিয়ে তৈরি করে ছবি। মিডজার্নির যাত্রাটা শুরু হয়েছিল আরও আগে। এসব ছাড়াও আছে গুগলের ছবি তৈরির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইমাজেন। আছে স্টেবল ডেফিশিন। গত বছর এআই ব্যবহার করে শুধু ছবি আঁকাই সম্ভব হয়নি, বরং ভিডিওচিত্রও তৈরি করা গেছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো শুধু ছবি বা ভিডিও নয়, চিত্রনাট্য নিয়ে পুরো সিনেমা তৈরি করে দিতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার উপায় নেই। কারণ, বিভিন্ন শিল্পীর ছবি ব্যবহার করে সে ধাঁচে নতুন ছবি তৈরির এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে এআইআর্ট সফটওয়্যারগুলোর বিরুদ্ধে একদল শিল্পী মামলা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এই মামলার ফলাফলসহ সংশ্লিষ্ট আরও অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ ধরনের ব্যবহারের ভবিষ্যৎ।
তবে এটুকু বলাই যায়, মিডিয়া এবং দৈনন্দিন কাজের নানা সফটওয়্যার ও টুলসে চলতি বছর বাড়বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজন। হয়তো আরও চমকপ্রদ কাজ করতে পারে, এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেখা মিলবে এ বছর।
অঙ্গ প্রস্তত ও প্রতিস্থাপন
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক সময় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয় মানুষের। প্রতি বছর পৃথিবীজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু অনেক সময় মানুষ অঙ্গের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই মারা যান। অর্থাৎ অঙ্গ সহজলভ্য নয়।
প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার এক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাময় বিষয় হতে পারতো। কিন্তু বিষয়টা সহজ নয়। মানবদেহ বাইরে থাকা আসা জিনিসকে গ্রহণ করে না।
ভবিষ্যতে তাই অঙ্গের চাহিদাপূরণের জন্য প্রাণীকে উৎস হিসেবে ব্যবহার করা খুব কাজের বুদ্ধি নয়। বরং কৃত্রিমভাবে কীভাবে অঙ্গ তৈরি করা যায়, তা চেষ্টা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এজন্য তারা সাহায্য নিচ্ছেন থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের।
দীর্ঘমেয়াদে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরির কারখানা দেখা যেতে পারে। যার প্রভাবও হয়তো দেখা যাবে চলতি বছর। তবে কার্যকর কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি এবং প্রতিস্থাপনের কারখানা নির্মাণের বিষয়টি সম্পন্ন হতে এখনও প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর সময়ের প্রয়োজন।
চিপ ডিজাইনের নতুন যুগ
কখনো চিন্তা করে দেখেছেন, আপনার স্মার্টফোনটি কীভাবে অন্য কোম্পানির তৈরি ব্লুটুথ স্পিকারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়? কারণ, সব কোম্পানিই ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে একটি আদর্শ মানদণ্ড মানে। এই মানদণ্ডে প্রযুক্তিটির ডিজাইন স্পেসিফিকেশন বলে দেওয়া থাকে। অর্থাৎ প্রযুক্তিটি কেমন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করবে এবং এর ডাটা এনকোডিং প্রটোকল কেমন হবে, তা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। ব্লুটুথ ছাড়াও ইথারনেট, ওয়াইফাই, পিডিএফ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও আদর্শ মানদণ্ড মানা হয়। এই ওপেন স্ট্যান্ডার্ডগুলো RISC-V বা রিস্ক ফাইভ নামে পরিচিত। যে কেউ বিনামূল্যে এই স্ট্যান্ডার্ডগুলো দেখতে পারে। সে অনুযায়ী কম্পিউটারের চিপ তৈরি করতে পারে।
ইনটেল বা এএমডির মতো চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি প্রসেসর বা চিপের ডিজাইন শুধু নিজেদের কাছেই রাখে। ফলে কোনো কোম্পানির তৈরি হার্ডওয়ার বা সফটওয়্যার এই চিপ ব্যবহার করে চালাতে হলে, চিপের উপযোগী করে তৈরি করতে হয়। এই উপযোগী করার জন্য কিছু ডিজাইন স্পেসিফিকেশন কিনে নিতে হয় চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি কাছে থেকে।
এই সীমাবদ্ধতা কাটাতে রিস্ক ফাইভ দারুণ একটি উদ্যোগ। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩ হাজার ১০০টি প্রতিষ্ঠান এখন রিস্ক ফাইভের সঙ্গে যুক্ত। এর মাঝে আছে বিভিন্ন কোম্পানি ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠান। রিস্ক ফাইভ-এর বিকাশের জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইনটেল ১০০ কোটি ডলার অর্থ সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছিল।
বর্তমানে ইয়ারবাড, হার্ডড্রাইভ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য চিপ তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে রিস্ক ফাইভ প্রযুক্তি। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, কয়েক বছরের মধ্যই এই প্রযুক্তিতে তৈরি চিপ প্রায় সকল ডিভাইসে দেখা যাবে। চিপ ডিজাইনের নতুন দিগন্তের অগ্রযাত্রা বেশ ভালোভাবে দেখা যাবে এ বছর।
প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ
বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই প্রাচীন মানুষের দাঁত ও হাড় গবেষণার জন্য ভালো যন্ত্রের অপেক্ষায় ছিলেন। আগে, গবেষণার জন্য উপযুক্ত নমুনা খুঁজে পাওয়াই ছিল বেশ কষ্টকর।
বর্তমানে সাশ্রয়ী কৌশল ও নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ-এরও বাণিজ্যিক সিকোয়েন্স করা যায়। ফলে, প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণের কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে।
এমনকি বর্তমানে দাঁত বা হাড়ের মতো উপাদান নয়, বরং মাটিতে মিশে থাকা নিয়ানডার্থাল প্রজাতির মানুষের মুত্রের অতি আণুবিক্ষণীক অংশ থেকেও ডিএনএ বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণাগুলো আরও সামনে আসে যখন গত বছর নভেম্বরে বিলুপ্ত হোমিনদের জিনোম এবং মানব বিবর্তনবিষয়ক গবেষণার জন্য নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন সুইডিশ জিনবিজ্ঞানী সোয়ান্তে প্যাবো।
প্রাচীন এসব ডিএনএ নিয়ে গবেষণা আমাদের শুধু অতীতের কথাই বলে না, বরং ভবিষ্যতে অনেক রোগ বা অস্বাভাবিকতা কীভাবে রোধ করা যায়, সেই সূত্রও পাওয়া যায়। তাই এ বছর প্রাচীন জিন বিশ্লেষণ নিয়ে বিজ্ঞান মহল থাকবে সরব।
ব্যাটারি রিসাইকেলিং
বৈদ্যুতিক গাড়ি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির চাহিদা। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৫০ সালের মাঝে এই চাহিদা বেড়ে যাবে প্রায় ২০ গুণ।
এই চাহিদা পূরণের জন্য পুরাতন ব্যাটারি রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহারোপযোগী করা প্রয়োজন। তবে এই পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা একই সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ও পরিবেশ বান্ধব হওয়া জরুরী।
বর্তমানে রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটিগুলো পুরাতন ব্যাটারি থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ লিথিয়াম এবং প্রায় শতভাগ কোবাল্ট ও নিকেল আলাদা করতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম, কপার বা গ্রাফিনের মতো অন্যান্য উপাদানও বেশ ভালো পরিমাণে পুনরুদ্ধার করা যায়।
বর্তমানে ব্যাটারি রিসাইক্লিং শিল্পের নেতৃত্বে আছে চীন। কাল্ট (CALT)-এর মতো বড় মাপে ব্যাটারি কোম্পানিও তাদের অধীনে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাটারি রিসাইক্লিং-এর জন্য নীতিমালা প্রনয়ণ করেছে। ইইউ অন্তর্ভূক্ত প্রতিটি দেশের ব্যাটারি নির্মাতা কোম্পানিকে মেনে চলতে হবে সেই নীতিমালা।
ব্যাটারির চাহিদা গত কয়েক দশকে ভীষণভাবে বেড়েছে। এই চাহিদা পূরণের জন্য শুধু রিসাইক্লিং একমাত্র সমাধান নয়। বর্তমানে ব্যাটারি রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াও পুরোপুরি নিখুঁত নয়। কিন্তু ব্যাটারি রিসাইক্লিং প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা হলেও এই বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে পারবে। নিরাপদ রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতি উন্নয়নও হতে পারে আরও বেগবান।
অপ্রতিরোধ্য বৈদ্যুতিক গাড়ি
বৈদ্যুতিক গাড়ি বদলে দিচ্ছে গাড়ির শিল্প বা বাজার। শুরুর দিকে এ ধরনের গাড়ির প্রতি মানুষ কম আকৃষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া নতুন কার ও ট্রাকের ১৩ শতাংশই ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি। অথচ দুই বছর আগেও সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ৩০ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সব মিলিয়ে এ বছর বৈদ্যুতিক গাড়ি আরও বেশি ব্যবহৃত হবে বলেই মনে হয়। সে হিসেবে বাড়বে উৎপাদনও।
সামরিক ড্রোনের বিশাল মার্কেট
প্রায় এক দশক ধরে যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিজেদের উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন ড্রোন নিয়ে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে চীন, ইরান বা তুরষ্কের তৈরি অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যের বিভিন্ন ড্রোন। এসব ড্রোন পরিচালনার প্রযুক্তিও ভিন্ন।
এসব ড্রোনের মাঝে একটি ড্রোনের কথা আলাদা ভাবে বলতে চাইলে ‘বেইরাকতার টিবি টু’-এর কথা বলতে হবে। ৫০ লক্ষ ডলার দামের এই ড্রোনটি তৈরি করেছে তুরষ্কের কোম্পানি বেইকার কর্পোরেশন।
ড্রোনটি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৩৮ মাইল বেগে ছুটতে পারে। প্রায় ১৮৬ মাইল দূর থেকেও যোগাযোগ করতে পারে। নির্মাতা কোম্পানিটির দাবী, এটি এক চার্জে উড়তে পারে প্রায় ২৭ ঘন্টা। এ ছাড়াও নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সরাসরি ভিডিও পাঠাতে পারে টিবি টু নামের এই ড্রোনটি। আছে লেজার নিয়ন্ত্রিত বোমা বহন ও নিক্ষেপের যন্ত্র।
এক কথায়, দূরে বসে যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য এ এক ভয়ানক আদর্শ অস্ত্র। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর সহজলভ্যতা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘রিপার’-এর মতো ড্রোনগুলো আরও সমৃদ্ধ। কিন্তু সেগুলো একই সঙ্গে ব্যয়বহুল। আছে রপ্তানি সংক্রান্ত জটিলতা। কিন্তু ‘টিবি টু’-র ক্ষেত্রে সেসব সমস্যা নেই।
২০১৬ সালে তুরস্কের সামরিক বাহিনী কুর্দিদের বিরুদ্ধে এই ড্রোন ব্যবহার করেছিল। এরপর লিবিয়া, সিরিয়া, ইথিওপিয়া এবং আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় আজারবাইজান ব্যবহার করেছে ড্রোনগুলো।
২০১৯ সালে দনবাসে সামরিক অভিযানের জন্য ছয়টি ‘টিবি টু’ কিনেছিল ইউক্রেন। ড্রোনগুলো পৃথিবী জুড়ে সামরিক বাহিনীর আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয় ২০২২ সালের শুরুর দিকে। কারণ, সে সময় রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে এই ড্রোনগুলোই ব্যবহার করেছিল ইউক্রেন।
যুদ্ধে এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে সুবিধাজনক। পৃথিবীজুড়ে তাই সামরিক ড্রোনের এক বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে এ ধরনের ড্রোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পৃথিবীজুড়ে বেসামরিক জীবনের নিরাপত্তাকে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।