বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে মানুষ প্রায়শই আলোর গতিতে ছুটতে থাকে। কিন্তু আলোর গতিতে কি মানুষের শরীর ছুটতে পারে? প্রশ্নের উত্তর জানতে প্রথমে চলুন কল্পনা করি। কল্পনায় ভাবুন মানুষের পক্ষে আলোর গতিতে চলাফেরা করা সম্ভব। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৮ মিটার বা প্রতি সেকেন্ডে ৯৮ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার ৫৬ ফুট। আরও সহজভাবে বলা যায় প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। মানুষ ধ্রুবক বেগ অনুভব করতে পারে না। আর তাই আলোর গতিতে ছুটলে আপনি কিছুই লক্ষ করতে পারবেন না। আলোর গতিতে ছুটলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে সেই গতিতে পৌঁছানোর জন্য ত্বরণ অর্জনের ক্ষেত্রে। অত্যধিক ত্বরণ বল আমাদের ক্ষতি করতে পারে। এতে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাইকেল প্রাভিকা বলেন, ‘উচ্চ ত্বরণে মানুষের রক্ত সঞ্চালনে খুব কষ্ট হয়। বেশির ভাগ মানুষ অল্প সময়ের জন্য ৪ থেকে ৬ মাত্রার মাধ্যাকর্ষণ বা জি-ফোর্স সহ্য করতে পারে। জি-ফোর্স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত রক্ত সঞ্চালনের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়। আপনার রক্ত জমতে শুরু করবে। যদি শক্তি হ্রাস না করা হয় তাহলে আপনি মারা যাবেন। শরীরে অক্সিজেনের অভাবে আপনার মৃত্যু হবে। জেট বিমানের পাইলট বা উচ্চ স্তরের জি-ফোর্স সহ্য করতে হয়—এমন কাজে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের এ জন্য বেশ সতর্ক থাকতে হয়। জি-ফোর্সের কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে বিশেষ শারীরিক কৌশল শেখানো হয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পেশি টান টান করে রাখতে হয় তখন। স্বল্প সময়ের জন্য ৯ মাত্রার জি-ফোর্স বা ধাক্কা প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষ স্যুট পরতে হয়।’

মাইকেল প্রাভিকা আরও বলেন, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আলোর গতিতে চলে গেলে মানুষের শরীর কেকের মতো হয়ে যাবে। জি-ফোর্স ক্যালকুলেটর অনুসারে ৬ হাজার মাত্রার জি-ফোর্স শক্তি আপনাকে আঘাত করবে। আলোর গতিতে নিরাপদে ছুটতে হলে আপনার ত্বরণ আরেকটু কমিয়ে দেখা যেতে পারে। জি-ফোর্সের মাত্রা ২ হলে আলোর গতিতে পৌঁছাতে পাঁচ মাসের মতো সময় লাগবে। চলার পথ সরল হলে আর কোনো বায়ু প্রতিরোধক না থাকলে ৫ মাস সময় লাগবে। আর যদি জি-ফোর্সের মাত্রা ১ হয় তাহলে আপনার আলোর গতিতে পৌঁছাতে ১১ মাসের বেশি সময় লাগবে। দুর্ভাগ্যবশত, এমন উচ্চগতিতে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। আপনার একটি সীমিত ভর না থাকলে আপনি আলোর গতিতে যেতে পারবেন না।’

আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে দেখা যায়, ভরসহ কোনো বস্তু আলোর গতির কাছাকাছি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ভর বাড়তে শুরু করে। যদি কোনো বস্তু আলোর গতিতে পৌঁছাতে পারে, তবে তা অসীমভাবে বিশাল হয়ে উঠবে। সেই গতি বজায় রাখতে অসীম শক্তির প্রয়োজন হবে। মানুষ নিজে দ্রুতগতিতে না ছুটতে পারলেও সাব অ্যাটোমিক বা উপ-পরমাণু কণাকে দ্রুত ছোটাতে পারে। কণা এক্সিলারেটরে মানুষ ইলেকট্রনের মতো কণাকে আলোর গতির প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ বেশি গতিতে চলতে পারে। একটি ইলেকট্রন দ্রুতগতিতে চালানো আর একজন ব্যক্তিকে সেই গতিতে ছোটানোর মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। এতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হবে, যা বলা যায় অসম্ভব।
সূত্র: স্পেস ডট কম

At HAMKO Future Tech Academy We are dedicated to shaping the future of technology by equipping students with the skills and knowledge needed to excel in the dynamic world of industrial attachment and freelancing programsHAMKO Future Tech Academy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here